বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি এখনো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সম্মতির অপেক্ষায়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ওই চুক্তি সই করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা ঝুলে আছে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা তাঁর বাংলাদেশ সফরেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে এখনো জটিলতা থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অভিমত ছাড়া ভারত ওই চুক্তি সই করতে চায় না। ভারতে ফেডারেল যে ব্যবস্থা তাতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মত ছাড়া চুক্তি সই করা কঠিন। ভারতে বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে তিস্তা নিয়ে জটিলতা এখনই কাটার কোনো লক্ষণ নেই।

তবে তিস্তার বাইরে আরো সাতটি নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে কাজ করতে গত অক্টোবর মাসে রাজি হয়েছে উভয় দেশ। সে অনুযায়ী দুই দেশ কাজ করছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফরে পানিবণ্টন চুক্তি করা সম্ভব হবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ঘিরে মোদির সফরে আসার কথা। এর আগে দুই সপ্তাহে পানিবণ্টন চুক্তির ব্যাপারে কতটা অগ্রগতি হবে তা নিয়েও সংশয় আছে।

এদিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরপর যে সরকারগুলো রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল সেগুলোর ব্যাপারে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে শ্রিংলার সফরে। দুই দিনের সফর শেষে শ্রিংলা গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়েছেন।

ভারত সরকার সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন সংশোধন (সিএএ) করে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার মনে করে, এ দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন হচ্ছে না।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব গত সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্পষ্টভাবেই সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে বর্তমান সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সংসদে রাজনীতিবিদরা একাধিকবার স্পষ্ট করেছেন এবং এগুলোর রেকর্ড আছে। এটি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এটি ১৯৭৫ সাল-পরবর্তী সময়ের জন্য প্রযোজ্য যখন সামরিক ও অন্য সরকারগুলো সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা অনুসরণ করেনি। এর ফলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশিকে তখন নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে যেতে হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি, বর্তমান সরকার তার সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও আইনে সংখ্যালঘুদের উদ্বেগের যথেষ্ট মাত্রায় সচেতন। আমি আশ্বস্ত করতে পারি, এটি ভূতাপেক্ষ প্রভাব। বর্তমানের ক্ষেত্রে এর কোনো কার্যকারিতা নেই। প্রাথমিকভাবে উপমহাদেশের লোকজন যারা ভারতে অবস্থান করছে তাদের জন্য এটি করা হয়েছে।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, ভারতে সিএএ, আসামে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে যে আশঙ্কা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সে বিষয়ে নয়াদিল্লি অবগত। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক কোনোভাবেই নষ্ট করতে চায় না।

অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা, সামাজিক-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন কোনো পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়।