করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালির নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি এসব দেশের বিশেষ অঞ্চল (যেখানে বেশি আক্রান্ত) থেকে আগত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের এখন থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

সোমবার (৯ মার্চ) বিকেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটির সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা জানান। তিনি এ কমিটির সভাপতি।

গত রোববার (৮ মার্চ) সরকারের আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ তিনজন ছাড়া আরও দুজনকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দু’জন ইতালিফেরত। তৃতীয় জন এদেরই মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন।

সোমবার দুপুরের প্রতিষ্ঠানটির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আরও চারজনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তবে পরীক্ষায় কারোর মধ্যেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তার মানে এ পর্যন্ত সর্বমোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিনজনই।

ওই সংবাদ সম্মেলনের পর করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটির সভা শেষে মন্ত্রী বলেন, বিদেশফেরত বিশেষ করে করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো থেকে আসা বাংলাদেশিদের বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টাইনে (সংক্রমণরোধে আলাদাভাবে) রাখার ব্যবস্থাও নেয়া হবে। আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালির নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এসব দেশে ফ্লাইট বন্ধের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।

অবশ্য, চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ ফেব্রুয়ারিই সেদেশের নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতালি, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের ব্যাপারেও একই ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন।

বিদেশ ফেরত দু’জনের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে করোনা প্রতিরোধ করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে যারা বাংলাদেশে আসছেন, আমি বলব, এই মুহূর্তে আপনারা দেশে আসবেন না। নিজ নিজ স্থানে থাকুন। এটা আগেও আমরা বলেছি। অ্যাম্বাসেডরদেরও (রাষ্ট্রদূত) আমরা নির্দেশনা দিয়েছি- তাদের জন্য সেফ জোনের ব্যবস্থা করতে।

মন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে তারা বেশি যাবেন, আমরা সেটাও চাই না। সবাইকে সেল্ফ-কোয়ারেন্টাইনে (স্বেচ্ছায়) থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে খবর দেয়া হয়েছে, যারা আসবেন (বিদেশফেরত) সেল্ফ-কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তার যারা প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন- বিষয়টি আমাদের জানাবেন। আমরা তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেব।

জাহিদ মালেক বলেন, সচেতনতামূলক কার্যক্রম আমরা আগে থেকেই নিয়েছিলাম। এখন নতুন করে পোস্টার ও ব্যানার তৈরি করা হচ্ছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে তা সারাদেশে পৌঁছে দেয়া হবে।

দেশে তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হলেও আপাতত স্কুল স্বাভাবিকভাবে চলবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সারাদেশের স্কুল ও কলেজগুলোতে হাত ধৌত করার জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। তবে পরিবর্তিত ব্যবস্থায় প্রয়োজন হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে।

খেলাধুলা, ধর্মীয় বা সামাজিক প্রোগ্রাম সীমিত আকারে করার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এগুলো না করলেই ভালো– এ বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্যাবল টিভিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারণা চালানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দর্শক সমাগম যেন না হয়, সে বিষয়ে আমরা বলেছি।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম হঠাৎ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা আমরা নেব।

দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এতে মৃত্যুঝুঁকি ইবোলা ভাইরাসের চাইতে অনেক কম, ৩ শতাংশেরও কম। এটা হবে, আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। আমরা যদি সকলে মিলে কাজ করি, প্রটেকটিভ মেজারগুলো মেনে চলি, পাবলিক গ্যাদারিং পরিহার করি- যেগুলো আমরা বলে আসছি, আশা করি করোনাভাইরাস আমরা প্রতিরোধ করতে পারব। এ ভাইরাস প্রতিরোধে হাত ধোয়াসহ প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে, জানাতে হবে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাদের পরিবারগুলোতেও সতর্কতামূলক বার্তা পৌঁছাতে হবে।