দেশের প্রথম প্রবেশনিয়ন্ত্রিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) খুলে দেওয়া হচ্ছে। সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
বিশ্বমানের মহাসড়ক হিসেবে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটি সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর তা যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি চালু হবে। আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা যেতে সড়কযানে লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। তবে এখন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে এই এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে সড়কযানে সরাসরি যেতে লাগবে প্রায় আধাঘণ্টা। এই মহাসড়ক ব্যবহারের আগে যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া যেতে লাগত গড়ে দুই ঘণ্টা। এখন লাগছে ৩০-৪০ মিনিট। তবে প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুতে টোল আদায়ের জন্য যানজট হচ্ছে। এলাকাবাসী, চালক ও যাত্রীরা জানান, এ সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবি পুরনো। এখানে টোল আদায় বন্ধ করা হলে এই পথে ভ্রমণ সময় আরো কমবে।
৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর চার কিলোমিটার নির্মাণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে সেতুটি চালু হবে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা আশা করছেন। তখন এ মহাসড়ক ব্যবহার করে শতভাগ সুফল ভোগ করবেন বরিশাল বিভাগের ছয়, খুলনা বিভাগের ১০ ও ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার যাত্রীরা। যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার ও পাচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এটি।
মুজিববর্ষে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হবে আশা করা হলেও সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ায় মুজিবর্ষের আগেই এটি চালু হচ্ছে। আগামী ২০ বছরের ক্রমবর্ধমান যান চলাচলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, এই এক্সপ্রেসওয়ে এশীয় মহাসড়কের অংশ। এ ছাড়া দেশে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের সমান্তরালে ছয় লেনের একটি, ঢাকার বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত একটি ও ঢাকা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত আরো একটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে এক্সপ্রেসওয়ে আরো আগেই চালু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে চালুর বিষয়ে বুয়েট অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, দেশের সব মহাসড়কেই বিরতিহীনভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ, এসব মহাসড়ক বিশ্বমানের নয়। এগুলোতে আছে প্রতিবন্ধকতা ও একের পর এক মোড়। মাওয়া হয়ে যে এক্সপ্রেসওয়ে চালু হচ্ছে তা প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত, তাই যানজট হবে না। ভ্রমণ সময় সাশ্রয়ী এটি। এ কারণে উপকারভোগীরা টোল দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না। ২০০৫ সালে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। তাতে হালকা যানবাহনের লেন ছিল। তবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে প্রথম বিশ্বমানের মহাসড়ক।
গতকাল বুধবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া অংশ ঘুরে দেখা যায়, মূল মহাসড়কটি চার লেনের, তার দুই পাশে হালকা যানবাহনের জন্য আছে দুটো সার্ভিস লেন। চার লেন মহাসড়কের দুই পাশে থাকছে সাড়ে পাঁচ মিটার করে সার্ভিস লেন। এটির পুরো পথ অবমুক্ত করা না হলেও বেশির ভাগ অংশ ব্যবহার করে সড়কযান চলাচল করছিল। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বমানের মহাসড়কে পাঁচটি উড়াল সেতু কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড, আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার ও মালিগ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে।
১৯টি নিচ দিয়ে চলার পথ, ১০০টি ছোট-বড় সেতু আছে। জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে রেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে প্রকল্পের নির্মাণকাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন বা এসডাব্লিউও (পশ্চিম)। ২০১৬ সালের মে থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগেই নির্মাণ শেষ হয়েছে। আগামী জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকে সমন্বিতভাবে টোল আদায় করা হবে এক্সপ্রেসওয়ের। এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি মোড়ে কাজ শেষ হয়নি। তবে বিদ্যমান বিভিন্ন সেতুর টোল দিতে হবে। মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, টোল প্লাজা নির্মাণ ও পদ্মা সেতু নির্মাণের পর টোল আদায়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
মুন্সীগঞ্জে আনন্দের বন্যা : এদিকে মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে আনন্দে ভাসছে মুন্সীগঞ্জবাসী। সিরাজদিখান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল হাসান নাহিদ বলেন, ‘এ সড়কের জন্য দীর্ঘ দেড় বছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নির্মাণকাজের জন্য ধুলোবালিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাদের এত সুন্দর একটা রাস্তা উপহার দেবেন তা এলাকাবাসীর কল্পনায়ও ছিল না।’
লৌহজংয়ের মেদিনীমণ্ডল ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন খান বলেন, ‘এখন মাত্র ৩০ মিনিটে আমরা ঢাকায় পৌঁছে যাব। ভাবতেই ভালো লাগছে।’
ওই পথের নিয়মিত যাত্রী মাদারীপুর সদর উপজেলার ইকরামুল হক বলেন, ‘এই মহাসড়ক চালু হচ্ছে জেনে আমরা ভীষণ খুশি। শিবচর থেকে ঢাকা যেতে খুব অল্প সময় লাগবে।’