করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কাল রবিবার থেকে শুরু করছে সরকার। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রতি সপ্তাহে এক লাখের বেশি লোক সরকার ভর্তুকিমূল্যের এই চাল কিনতে পারবেন সরকার নির্ধারিত ডিলারদের কাছ থেকে। 

প্রাথমিকভাবে দেশের মহানগর ও জেলা শহরেই এই চাল বিক্রি চলবে। পরবর্তীতে তা উপজেলা বা পৌরশহরে সম্প্রসারিত হবে।

আর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে ৩৩জন সরকার নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে দিনে ৩০ টন চাল দোকানেই বিক্রি শুরু হবে কাল রবিবার থেকে। ডিলারদের স্থানীয় চাহিদামতো বিক্রির জন্য আতপ বা সিদ্ধ চাল দেয়া হবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুলত করোনাভাইরাসের সময় কর্মহীন মানুষগুলোর পাশে খাদ্য নিয়ে সহযোগিতা করতেই সরকারের এই উদ্যোগ। তিন পার্বত্য জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগে সবকটি জেলা শহরে ১৬১জন ডিলারদের মাধ্যমে আমরা রবিবার দুপুর থেকে চাল বিক্রি শুরু করছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।’

আমরা আশা করছি শিগগিরই উপজেলা কিংবা পৌর শহরগুলোতেও এই কার্যক্রম শুরু হবে; এজন্য তালিকা প্রস্তুত করে আমরা মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি-যোগ করেন তিনি।

উল্লেখ্য ভোক্তাদের মাধ্যমে ১০টাকা কেজি দরে যে চাল সরকার দিচ্ছে; সেটি বাজারে কেজি ৩০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। দেশিয় উৎপাদনকৃত চাল কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সরকার আগেই গুদামে মজুদ করেছে। সেই মজুদ থেকে এই চাল সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, সরকারী নির্দেশনামতে সপ্তাহে রবি, মঙ্গল ও বৃহষ্পতিবার এই তিনদিন ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি চলবে। প্রতিদিনের জন্য একজন ডিলারকে বরাদ্দ দেয়া হবে ২ টন চাল; অর্থ্যাৎ সপ্তাহের তিনদিনের জন্য মোট ৬ টন। প্রতিদিন একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কিনতে পারবেন। চট্টগ্রাম বিভাগে দিনে ৩৫ হাজার জন এই সুবিধা পাবেন। আর সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২২ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হবে। সপ্তাহে একজন ভোক্তা ৫ কেজি করে চাল কিনলে সর্বমোট ১ লাখ ৪ হাজার জন সুবিধাভোগি হবেন।

কিন্তু সপ্তাহে এক লাখের বেশি লোককে ১০টা কেজি দরে সরকারী চাল দেয়া কিভাবে নিশ্চিত করবেন জানতে চাইলে জামাল হোসেন বলেন, এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রতিজন ডিলারদের কাছে আমাদের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পৌঁছা হয়তো সম্ভব নয় কিন্তু জেলা পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আমরা তদারকি কাজে যুক্ত করছি। মহানগরে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের যুক্ত করার সরকারী নির্দেশনা রয়েছে। সাথে পুলিশের সহায়তাও চাইছি যাতে করোনাভাইরাস ঠেকাতে নিরাপদ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চাল বিক্রি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা আছে, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য ভোক্তার মোবাইল নাম্বারসহ বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ভোক্তা হিসেবে নির্বাচন করা যাবে না। এছাড়া উক্ত পরিবারের কেউ যদি খাদ্যবান্ধব অথবা ভিজিডি কর্মসূচির উপকারভোগী হয়ে থাকেন তাহলে তিনি এ কর্মসূচির আওতায় ভোক্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না।

এ বিষয়গুলো তদারকি কিভাবে করবেন জানতে চাইলে জামাল হোসেন বলছেন, আমরা চেষ্টা করবো সবার অন্তত মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করার। তবে অনেক দিনমজুর, রিকশা চালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়সহ থাকবে যাদের আমরা হয়তো অনেক তথ্য পাবো না। এরপরও চেষ্টা থাকবে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের।