বিশ্বের বহু দেশের মত ব্রিটেনেও ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। মারণ এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৮৪ হাজার ২৭৯ জন মহামারি এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ হাজার ৬১২ জন। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে করোনায় মৃতদের দাফনের জন্য দেশটিতে বিশাল বিশাল আকৃতির গণকবর খোঁড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
করোনয় মৃত মুসলমানদের দাফনের জন্য দক্ষিণ পূর্ব লন্ডনে গণকবর খনন করা হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার দাফনে সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুসলিমদের জন্য চিজলেহার্স্টের কেমনাল পার্ক কবরস্থানে ১০ টির মতো লাশ একসঙ্গে দাফন করা যায় এমন গণকবর খোঁড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল।
ইসলাম ধর্মে মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণত দাফন শেষ করার রীতি রয়েছে। এছাড়া লাশ শ্মশানে পোড়ানো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমন প্রেক্ষাপটে বিপুল সংখ্যক মুসলিমদের লাশ দাফনে গণকবরের বিকল্প নেই। বর্তমানে অনেক মুসলিম পরিবারকে তাদের স্বজনদের লাশ দাফনে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের কারণে ব্রিটেনে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ১০ মুসলিম নারী-পুরুষকে গণকবরে দাফন করা হয়েছে। ব্রিটেনে কভিড-১৯ এ মৃত্যু হওয়া সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি ১৩ বছর বয়সী ইসমাইল মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাবসহ সেখানে পাঁচজন পুরুষ ও পাঁচজন মহিলাকে দাফন করা হয়।
ফিউনারাল ডিরেক্টররা বলছেন, আরও ৫০ জনের মৃতদেহ দাফনের অপেক্ষায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই কবরস্থানের একটি অংশ শুধু মুসলিমদের জন্য, যা সাফ গ্রেইভস নামে পরিচিত। এখানে ইসলামী রীতি অনুসারে মৃতদেহগুলো পৃথকভাবে সামাধিস্থ করা হবে। মৃতদের কাফনে আচ্ছাদিত করা হবে প্রথা অনুসারে পবিত্র মক্কার দিকে মুখ করে। এ ছাড়া মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও ৬টি গণকবরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কবরস্থানের বিশেষ প্রকল্প পরিচালক রিচার্ড গোমারসাল জানিয়েছেন, বর্তমানে বেশির ভাগই দাফন বা শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান হচ্ছে করোনাভাইরাসজনিত। আমরা ব্যক্তিগত প্লটগুলোর চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। আমরা কীভাবে দ্রুত দাফন করতে পারি সে জন্য ইসলামিক স্কলারদের পরামর্শ নিচ্ছি।
লন্ডনে মুসলিমদের দাফন করার জন্য মাত্র দুটি কবরস্থান রয়েছে। বিপুল সংখ্যক লাশ আসায় সেখানে সবার জন্য ব্যক্তিগত প্লট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে দুই গণকবর খনন করা হয়েছে। যা গভীরতায় ১ দশমিক ৫ মিটার এবং খনন করতে প্রায় অর্ধেক দিন সময় লেগেছে। আরও গণকবর খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সূত্র- মিরর ইউকে।