বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থাকবা বসিয়েছে ভারতেও। জীবন চলছে না সোজা পথে। হিসেবকষা জীবনের সব ছক বদলে দিয়েছে মারণ এই ভাইরাস। অন্য সব সেক্টরের মতো থমকে আছে বিনোদন জগতও। সব ধরনের শুটিং বন্ধ। গোটা ভারতে চলছে লকডাউন। বাইরে বেরোনো নিষেধ। তেমনি বারণ ছাদনা তলায় যাওয়াও। বুঝলেন না তো! করোনার জেরে অন্য সবকিছুর মতো আটকে আছে অনেক তারকার বিয়েও। চলুন জেনে আসি, কাদের বিয়ে কাটা পড়েছে করোনার কোপে।

পূজা ও কুণালের বিয়ের তারিখ চলে গেছে বুধবার

দীর্ঘ দিনের বন্ধু অভিনেতা কুণাল বর্মার সঙ্গে ১৫ এপ্রিল সাত পাকে বাঁধা পড়ার কথা ছিল ভারতীয় অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু করোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে তাদের বিয়েতে পড়েছে বাধা। হিন্দি ধারাবাহিকের অভিনেত্রী পূজা ‘চ্যালেঞ্জ টু’, ‘হইচই আনলিমিটেড’-এর মতো কয়েকটি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেছেন। তিন বছর আগে ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’-এর অভিনেতা কুণালের সঙ্গে এনগেজমেন্ট হয় তার। ধুমধাম করে বিয়ে করার প্ল্যান ছিল দুজনের।

পূজা জানান, ‘বাঙালি মতে রীতি মেনে বিয়ে করতাম। সঙ্গে মেহেন্দি, ককটেল পার্টিরও আয়োজন ছিল। কিন্তু সব বাতিল। লকডাউনের মেয়াদ শেষ হলে আইনি বিয়ে করব। তার পর সব কিছু স্বাভাবিক হলে রিসেপশনের প্ল্যান।’ পূজার স্বরে বিষণ্ণতা। তবে আইনি পদ্ধতিতে বিয়েটা সেরে সংসার কীভাবে শুরু করবেন, তা নিয়েও ভাবছেন তিনি। কারণ, বিয়ের আয়োজনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি টাকা দিয়েছেন। তা ফেরত পাওয়ার আদৌ কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, তা নিয়েও চিন্তায় অভিনেত্রী।

বানচালের পথে রণিতা ও সৌপ্তিকের বিয়েও

করোনাতঙ্কের এমন অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে এ বছর বিয়ের প্ল্যানই বানচাল হওয়ার পথে রণিতা দাস ও সৌপ্তিক চক্রবর্তীর। ছোট পর্দার এই জুটি দশ বছরের সম্পর্কে সামাজিক সিলমোহর বসাতে চলতি বছরকেই বেছে নিয়েছিলেন। ঠিক ছিল, বৈশাখ মাস পড়লে বিয়ের দিন ধার্য করা হবে। বৈশাখ তো পড়েছে কিন্তু করোনার কোপে তাদের বিয়ে এখন অলীক কল্পনা।

এ সম্পর্কে স্টার জলসায় প্রচারিত ‘ইষ্টি কুটুম’ ধারাবাহিকের বাহা চরিত্রে অভিনয় করা রণিতা দাস বলেন, ‘চেয়েছিলাম ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’-এর মতো আমাদের বিয়ে হোক। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ধাক্কা কাটিয়ে আমরা কতটা কী করতে পারব, সেটা খুবই চিন্তার। এমন পরিস্থিতির জন্য কেউই তৈরি ছিল না।’

সৌরভ তো বুঝতেই পারছেন না কবে বিয়ে করবেন

বিয়ে মানে যেমন দুটি হৃদয়ের মিলন, তেমনই দুটি পরিবারেরও স্বপ্নপূরণ। কিন্তু অভিনেতা সৌরভ চট্টোপাধ্যায় এখন বুঝে উঠতেই পারছেন না, বিয়েটা কবে করবেন। মাস ছয়েক আগে থেকেই ঠিক ছিল, বান্ধবী ত্বরিতার (চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে নভেম্বর বা ডিসেম্বর নাগাদ সাত পাকে বাঁধা পড়বেন তিনি। সেই মতো প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই বিয়ে পিছিয়ে গেছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য।

বিয়ে প্রসঙ্গে আক্ষেপের সুরে ‘বাঘবন্দি খেলা’ ছবির অভিনেত্রী অর্থাৎ সৌরভের প্রেমিকা ত্বরিতা বলেন, ‘বিয়ে নিয়ে আমাদের দুই পরিবারই খুব উৎসাহী। কিন্তু সেটা এখন কবে বাস্তবায়িত হবে জানি না।’ কাজেই এখন অনুকূল সময়ের প্রতীক্ষায় ত্বরিতা ও সৌরভ।

বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন ওম

করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, অনিশ্চয়তা, টানাপড়েনের কারণে এ বছর বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন অভিনেতা ওম। ছোট পর্দার অভিনেত্রী মিমি দত্তের সঙ্গে তার অনেক দিনের সম্পর্ক। চলতি বছরই তাদের চার হাত এক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় ভেঙে গেছে তাদের সেই স্বপ্ন।

ওমের মতো একই চিন্তা মানালি-অভিমন্যুরও

করোনার কারণে বিয়ের ভাবনা শতহস্ত দূরে রাখছেন অভিনেত্রী মানালি দে ও পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ও। তারা ভেবেছিলেন, এ বছর বিয়ে করবেন। কিন্তু করোনার জেরে তা বাতিল করেছেন। মানালি বলেন, ‘এ বছর আমাদের বিয়ের প্ল্যান ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে আরও অনেকটা সময় আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

তবু আশায় রয়েছেন তৃণা ও অভিজিৎ

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করবেন বলে আগেই ঠিক করে রেখেছেন অভিজিৎ ‘নীল’ ভট্টাচার্য ও তৃণা সাহা। তবে ওই সময় বিয়ে করবেন কী করবেন না, এ নিয়ে এই মুহূর্তে তারা মুখ খুলতে রাজি নন। কারণ, তারা এখনও আশায় রয়েছেন যে আগামী ফেব্রুয়ারির আগে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ‘কৃষ্ণকলি’র নিখিল অর্থাৎ নীল বললেন, ‘লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়লে পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা ধাক্কা খেতে পারে।’

তারকাদের মন দেয়া-নেয়া অনেক দিন আগেই হয়ে গেছে। অপেক্ষা ছিল শুধু একটা সইয়ের।শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপস্থিতিতে নতুন জীবনে প্রবেশের আনন্দ ভাগ করে নেয়ার। কিন্তু মরণ ভাইরাস করোনার আতঙ্ক কাটলে কবে বাজবে বিয়ের সানাই, তার উত্তর কারোই জানা নেই।

সূত্র- আনন্দবাজার।