*সরকারি হোমকোয়ারেন্টিনে থেকেও আক্রান্ত *পজেটিভ থেকে নেগেটিভ আসা চিকিৎসকের স্বামীসহ পরিবার আক্রান্ত, তবে উপসর্গ নেই *একদিনে ১৩ আক্রান্ত হতেই দেখা দিল আইসোলেশন সংকট *সংষর্ষ চলছেই, ঘটছে হত্যাকাণ্ডও*লাখো লোকের অংশগ্রহণে জানাজা নিয়ে তোলপাড়
একবার পজিটিভ, আরেকবার নেগেটিভ- মাঠপর্যায়ে সেবা দিতে থাকা এক চিকিৎসকের করোনার নমুনার ফল এমন। স্বামীসহ ওই চিকিৎসক করোনা নেগেটিভ আসার পর এবার শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের চার সদস্যের করোনা পজিটিভ এসেছে।
জেলার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয় ২০ জনের। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেখানে ১৪ জনকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। একদিনেই ১৩ জন করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় দেখা দিয়েছে আইসোলেশ সংকট!
হাসপাতালের টেকনেশিয়ানের বদলে অফিস সহায়ক (পিয়ন) করোনার নমুনা সংগ্রহ করছেন। প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে থেকেও আক্রান্ত হয়েছেন দুজন। আইসোলেশনে একপ্রকার জোর করেই এক নারীর সঙ্গে থাকছেন স্বজন।
এখানেই শেষ নয়। করোনা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তালগোলের যেন শেষ নেই। লকডাউন উপেক্ষা করে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হয়েছে হত্যাকাণ্ড। সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে বরেণ্য ইসলামী আলোচকের জানাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণ নিয়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩২। মারা গেছেন তিনজন। জানাজায় অংশ নেওয়া কয়েক গ্রামের লোকসহ হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকের সংখ্যা (বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ২৬ হাজার ৫০৬ জন। নমুনা সংগ্রহ করা ৬০৮ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৫৫ জনের করোনা নেগেটিভ এসেছে। গত ১১ এপ্রিল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে লকডাউন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের (শ্বশুর বাড়ি) এক নারী চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে ওই নারী চিকিৎসক জানান, নমুনা সংগ্রহ করার সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা ভালো না থাকার কারণে তিনি আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন। সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার কারণে গর্ববোধ করে নিজে মরে গেলেও কোনো ‘আফসোস’ থাকবে না বলে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে ওই নারী চিকিৎসক অসুস্থবোধ করার পর স্বামীর কাছে ময়মনসিংহের ভাড়া বাড়িতে চলে যান। তাঁর করোনা পজিটিভ হওয়ার খবরে ওই এলাকার মানুষ একপ্রকার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। ওই নারীকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্বামীসহ ওই চিকিৎসকের নমুনা আবার সংগ্রহ করা হলে নেগেটিভ আসে। এরই মধ্যে চিকিৎসকের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নমুনা নেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে আসা রিপোর্টে চিকিৎসকের শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও দেবরের স্ত্রীর করোনা পজিটিভ আসে।
তবে পজেটিভ আসা একজন জানান, তাঁদের কারো শরীরেই কোনো ধরনের উপসর্গ নেই। তাঁরা পুরোপুরি সুস্থ আছেন। চিকিৎসকের পজিটিভ আসার পর থেকে তাঁরা হোম কোয়ারেন্টিনেই ছিলেন। আইসোলেশনে গেলে বরং তাঁরা ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
অপরদিকে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ওই নারী চিকিৎসকের আরো পাঁচ সহকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসক ও তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ঢাকার খিলগাঁও এলাকার একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ এলাকার একজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। যদিও ঢাকার ওই ব্যক্তি এর মধ্যেই হোম কোয়ারেন্টিন থেকে চলে গেছেন। জেলার একমাত্র প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বিজয়নগর উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আক্রান্ত সহকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন দুজন চিকিৎসক, একজন স্যানিটারি পরিদর্শক, একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক, যক্ষা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রক সহকারী (টিএলসিএ)।
এদিকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক নাসির উদ্দিন খোকন এখন পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি লোকের করোনা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। টেকনেশিয়ানের অপারগতায় তিনি প্রশিক্ষণ ছাড়াই নমুনা সংগ্রহে বাধ্য হন। তবে ওই ব্যক্তির কোনো ধরনের সুরক্ষা না থাকায় এলাকার মানুষ আতঙ্কে আছেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নাসিরনগরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার প্রবাসীর স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। তবে তিনি অনেকটাই জোর করে সঙ্গে আরো একজনকে রাখছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশন ‘সংকট’ এর কথা স্বীকার করেছেন। বুধবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিজয়নগর হাসপাতাল কিংবা অন্য কোথাও আইসোলেশন বেড রেখে নতুন আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।