মহামারি করোনার প্রকোপে রাষ্ট্রায়ত্ব ১১টি ব্যাংকের ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো এ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আর্থিক ক্ষতির কারণ হিসেবে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি, সুদ আয় কমে যাওয়া ও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ কমানো এবং করোনাকালীন দুই মাসের সুদ স্থগিত রাখাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে। অন্যদিকে জনতার ২ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৮৫৭ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৩১৯ কোটি টাকা, বিডিবিএলের ১৫০ কোটি টাকা, কৃষি ব্যাংকের ৪৪০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১৭৯ কোটি টাকা, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ৬১ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ২৪৭ কোটি টাকা ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ক্ষতি হবে ৩১৬ কোটি টাকা। এর বাইরে পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনও তাদের আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ সচিব মৃত্যুঞ্জয় সাহা বলেন, সম্পতি ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রস্তুতি, সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণ এবং প্যাকেজ বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা নিরসণে সুপারিশমালা প্রণয়ন’ শীর্ষক এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম।
মৃত্যুঞ্জয় সাহা বলেন, ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করা ১১টি সরকারি ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে অবহিত করেছেন। এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। আর সেটি ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রীর কাছে জমাও দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনা পেলে পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়ে ঋণের সুদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবসায় প্রভাব পড়বে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখা থাকবে। তাই সমস্যা হবে না। কয়েকটি ব্যাংক প্রতিনিধি সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে তারল্য সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা করেছে ভিডিও কনফারেন্সে। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছে। তা ছাড়া প্রণোদনার সুদে অর্ধেক সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। তাই তারল্য সঙ্কট হবে না। আর এ ধরনের কোনো সঙ্কট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখবে।
ভিডিও কনফারেন্সে সরকারি ছয় ব্যাংক আরও বলেছে, সরকারের নির্দেশ মতে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। তাই ব্যাংকগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। উদ্বৃত্ত অর্থও জমা দেওয়া হলে ব্যাংকগুলো আরও চাপে পড়বে। তা ছাড়া করোনার জন্য ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় আরও বেড়ে গেছে।
ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, কোনো কারণে ব্যাংকগুলো প্রণোদনা ঋণের অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষিত ব্যাংকগুলোর নগদ জমা থেকে তা কেটে রাখা হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তাদের আদায়ের বিপরীতে অর্থ কেটে রাখার সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রণোদনা ঋণ বিতরণ কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, কৃষি ও এসএমই খাতে অধিক ঋণ বিতরণ এবং করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের ভিড় এড়াতে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
তারা বলেছে, করোনাকালীন ব্যাংকাররা ১০দিন কাজ করলেও পুরো মাসের বেতন এবং বেসিকের সমান প্রণোদনা পাবেন। এতে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় বাড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার আয়ও কম হবে।