শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

করোনাভাইরাসে কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ছুটির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার চালু হলে আগের মতো পরিচালিত হবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সচেতনতা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম গুরুত্ব পাবে বেশি।  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্লাসে আগে যেমন একসঙ্গে পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থীর বসার ব্যবস্থা ছিল, তা থাকবে না। টিফিনে দল বেঁধে আড্ডা দেওয়ার পরিবেশও বদলে যাবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে হবে। এসব বিষয় চিন্তা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক বা না হোক বিকল্পভাবে পাঠদান চলবে সারাবছরই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘করোনা বিস্তার কমে গেলে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে। আগের মতো করে স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাসসহ শিক্ষা কার্যক্রম চলবে না। কারণ করোনাভাইরাসের এই সমস্যা রাতারাতি নির্মূল হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগেই সব প্রস্তুতি নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে যে জটলা সৃষ্টি হবে তা কীভাবে সমন্বয় করা হবে তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুস্থ আছেন কিনা তা যাচাই করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কারোনা রোগ নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে বিকল্প হিসেবে।’

করোনার বিস্তার রোধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় গত ১৭ মার্চ থেকে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি চলছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছুটির সময় ঘরে বসেই শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে এই ছুটি বাড়তে পারে এমন সম্ভাবনায় সব শিক্ষার্থীকে পাঠদানের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে জানিয়েছিলেন পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেওয়া হবে।  বর্তমানে ৩০ মে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

তবে করোনা পরিস্থিতি ভালোর দিকে গড়ায় তাহলে দীর্ঘদিন বন্ধ না রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হতে পারে। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার।

বন্ধ থাকা কালে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস চলছে এবং ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও ক্লাস আপলোড করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনে ভিডিও ক্লাস চলছে। এছাড়া ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে একটি ওয়েব পোর্টাল ডেভেলপ করা হচ্ছে।      

এই পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে তার একটি গাইড লাইন দেয় শিক্ষা অধিদফতর। গত ২ মে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমান্বয়ে চালু করার সুবিধার্থে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও পেশার জন্য কারিগরি নির্দেশনা’ শীর্ষক পুস্তিকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়। এই গাইডলাইন ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার নির্দেশনা দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই গাইডলাইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।

করোনা পুরো নির্মূল না হলে বা পরিস্থিতি খুবই অনুকূলে না গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।  কারণ, রাজধানীর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাদাগাদি করে ক্লাস নেওয়া হয়। বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেঞ্চগুলো চার বা সাড়ে চার ফিট। এসব বেঞ্চে বসানো হয় তিন থেকে চারজন শিক্ষার্থী। এ কারণে সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে শারীরিক দূরত্ব মেনে ক্লাস করানো সম্ভব হবে না।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া রেজওয়ান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে একসঙ্গে ঢোকার সময় এবং ক্লাস নেওয়ার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাছাড়া শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস চালাবে এমন অবকাঠামো বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই। তাই করোনা সংকট না কাটলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ঝুঁকির বিষয়। তাছাড়া অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রয়োজেন শিক্ষাবর্ষ বাড়িয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যেতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া অনিরাপদ হবে। তবে পরিস্থিতি ভালোর দিকে গড়ালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে। সে ক্ষেত্রে শিফটিং ও রেশনিং করে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে অনলাইনে ক্লাস চলবে, ভার্চ্যুয়াল ক্লাসও চলবে। কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো অনলাইনে ভালো করেছে, কিন্তু আমাদের টার্গেট দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব শিক্ষার্থী। তাই  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি খুলে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য যা করা দরকার তা আমাদের করতে হবে।’     

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইডলাইনে বলা হয়েছে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে মহামারি প্রতিরোধক মাস্ক, জীবাণুনাশক এবং নন-কন্ট্যাক্ট থার্মোমিটার সংগ্রহ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বহিরাগত শিক্ষাদানকর্মীদের শরীরের তাপমাত্রা নিতে হবে। যাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়া যাবে তাদের প্রবেশ নিষেধ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষসহ মেঝে ও ঘরের দরজার হাতল, সিঁড়ির হাতলসহ বিভিন্ন বস্তুর তলপৃষ্ঠ ঘন ঘন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। শিক্ষাদান কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাত ধোয়াসহ অন্যসব স্বাস্থ্যবিধি শক্তিশালী করতে হবে। দ্রুত হাত শুকানো জীবাণুনাশক বা জীবাণুনাশক টিস্যু ব্যবহার করুন। হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ও নাক ঢাকতে টিস্যু বা কনুই ব্যবহার করতে হবে।