কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ৭ চিকিৎসকসহ ৯ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট দিলে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রক ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরীক্ষায় তাদের সবারই নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। 

সেই সঙ্গে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নমুনা সংগ্রহকারী দুই ল্যাব টেকনোলজিস্টের করোনা পরীক্ষার ফল কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাব থেকে নেগেটিভ দিলেও পুনরায় ঢাকার আইডিসিআরে পরীক্ষা করে পজিটিভ পাওয়া গেছে।

এই দুই ল্যাব টেকনোলজিস্ট নিজেরা করোনা আক্রান্ত হয়েও নিজেদের করোনামুক্ত মনে করে নাঙ্গলকোটে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ফলে তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। গত ২৩ মে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় এই ১১ জনের মধ্যে ৯ জনের পজিটিভ ও ২ জনের নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছিল।

এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে তারা পজিটিভ ও নেগেটিভ আসা চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীদের নমুনা আবার সংগ্রহ করে পুনরায় পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইডিসিআরে পাঠায়। সেখানে পরীক্ষার পর আইডিসিআরের পরিচালক ৭ চিকিৎসকসহ ৯ জনকে করোনা মুক্ত ঘোষণার নির্দেশ দেন।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেব দাশ দেব এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আইডিসিআরের পরিচালক ওই চিকিৎসকদের করোনামুক্ত ঘোষণা করে হাসপাতাল খুলে দিতে বলেছেন। কারণ চিকিৎসকদের নমুনা পজিটিভ আসার পর হাসপাতাল লকডাউন করে রাখা হয়েছে। 

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষার ২৩ মে এর প্রতিবেদনে দেখা যায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. শায়লা সারনুন, ডা. নুজহাত মিনহাজ, ডা. নাজমুস সালেহীন, ডা. কাজী মাহফুজ হিজভী, ডা. সাব্বির আহমেদ সিদ্দিকী, ডা. মাহাবুব হাসান, ডা. সাইদুর রহমানসহ ৭ চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী তাসলিমা ও মাসুদ হাসানসহ ৯ জনের করোনা পজিটিভ দেখানো হয়।

এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই টেকনোলজিস্ট হাবিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনের করোনা নেগেটিভ দেখানো হয়। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের দেওয়া এই রিপোর্টের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন করা হয়। এতে উপজেলার ৬ লাখ মানুষ চিকিৎসা বঞ্চিত হন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাব থেকে দেওয়া এ প্রতিবেদন সন্দেহ হয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের। 
 
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেব দাশ দেব জানান, আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই ১১ জনসহ উপজেলার ৫০ জনের নমুনা ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রক ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরে পুনরায় পরীক্ষার জন্য পাঠাই। পুনরায় পরীক্ষায় ডা. শায়লা সারনুন, ডা. নুজহাত মিনহাজ, ডা. নাজমুস সালেহীন, ডা. কাজী মাহফুজ হিজভী, ডা. সাব্বির আহমেদ সিদ্দিকী, ডা. মাহাবুব হাসান, ডা. সাইদুর রহমানসহ ৭ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী তাসলিমা ও মাসুদ হাসানের পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। 

তিনি আরো জানান, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষার নেগেটিভ দেখানো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই টেকনোলজিস্ট হাবিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনের করোনা পজিটিভ আসে। এই দুজন নিজেদের নেগেটিভ ধরে নিয়ে এতদিন নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

নাঙ্গলকোটে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৬৯ জনের। তাদের অন্তত ৫০ জনেরই পরীক্ষার রিপোর্ট কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেব দাশ দেব। তিনি বৃহস্পতিবার নাঙ্গলকোটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য দেন।

এদিকে, নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা, রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন মেশিন ও রোগী পরিবহন সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে বৃহস্পতিবার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স খুলে দেওয়া হয়। হাসপাতালের ২৩ চিকিৎসক ও কর্মচারীর নমুনা গত ২০ মে সংগ্রহ করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে পাঠালে ২৩ মে তাদের পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

এতে জেলাব্যাপী বড় ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। নাঙ্গলকোট সরকারি হাসপাতাল, ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৪টি বেসরকারি হাসপাতাল লকডাউন থাকায় উপজেলার সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গত ১৫ দিন অচল হয়ে পড়ে। এতে বিনা চিকিৎসায় গত ১২ দিনে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ দাবি করেন সেন্টার ফর সোস্যাল সার্ভিসেসের পরিচালক অধ্যক্ষ সায়েম মাহবুব।