সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তার কমতি নেই বাংলাদেশসহ সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার বেনাপোল শহরেও। এই জনপদের শুধুমাত্র বেনাপোল পৌরসভা এলাকায় চলতি মাসে প্রায় ১৫ জন করোনা ভাইরাসের পজিটিভ রিপোর্টে সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পুলিশ ও ছাত্রলীগের একজন কর্মী ও রয়েছে। এর মধ্যে দুইজন করোনাভাইরাস-এর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। আরো কয়েকজন জন মারা গেছেন সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে।
এর পরেও বেনাপোল বাজারে লোকসমাগম কমছে না। দিন দিন বেড়েই চলছে। দোকানসহ ফুটপাতে বসছে নানা পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা। এসব কথা ভেবে বেনাপোল পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ে শনিবার বেনাপোলের প্রধান সড়কে ভ্যান, রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রাখার জন্য মাইকিং করা হয়।
বাজারের বিপুল সংখ্যক লোকসমাগম দেখে বেনাপোল বাজার কমিটি ও পৌর কর্তৃপক্ষ দুইদিন আগে ফুটপাতসহ সকল জনসমাগম ঘটানো দোকান বন্ধ করে দেয়। এরপর বাজার কমিটি ও পৌর কর্তৃপক্ষ চলে গেলে আবারও ওই দোকানিরা ফুটপাতে বসে পড়ে তাদের দোকান নিয়ে। তারই ধারবাহিকতায় শনিবার বেনাপোল বাজার কমিটি আবারও মাঠে নামে। আর এ কমিটিসহ বেনাপোল পোর্ট থানা ও উপজেলা প্রশাসন এর যৌথ প্রচেষ্টায় বাজার স্থানান্তর করা হয় বেনাপোল বল ফিল্ডে। যা আগামীকাল রোববার থেকে কার্যকর হবে।
শনিবার সকাল থেকে বেনাপোল বাজারের প্রধান কাঁচাবাজার, মাছ বাজার ও ফুটপাত এলাকা বেনাপোল বাজার কমিটি মাইকিং করে সকল ব্যবসায়ীদের বেনাপোল বলফিল্ডে চলে যেতে বলে। এরপর ব্যবসায়ীদের তাদের দোকান গোছাতে দেখা যায়।
বেনাপোল পৌরসভা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার ও একটি বৃহৎ স্থলবন্দর। এ পথে প্রতিদিন ভারত থেকে পাসপোর্টধারী যাত্রী ও আমদানি পণ্যের গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করছে কয়েকশ‘ মানুষ। ব্যবসার কারণে দেশ বিদেশের অনেক লোকজন আসছে বেনাপোলে। তারপর চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসছে পরিবহন। যশোর-বেনাপোল সড়কে চলছে আন্তজেলা বাস, ঢাকা থেকে ও ঢাকাগামী ট্রেনও চলছে। এদের মাধ্যমে করোনা বিস্তার ঘটতে পারে বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন।
বেনাপোল পৌর প্যানেল মেয়র সাহাবুদ্দিন মন্টু বলেন, আমরা গত কয়েকদিন যাবত বাজারে লোক সমাগম যাতে না ঘটে সেই লক্ষে কাজ করছি। কিন্তু মানুষ সচেতন না। আমরা কার্যক্রম শুরু করে চলে গেলে আবার একই কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য জরুরিভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বেনাপোল পৌর স্যানেটারি ইন্সপেক্টর-এর সমন্বয়ে একটি বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বেনাপোল বাজারে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশা, জেএস পরিবহন, নসিমন ও করিমন আগামি ২১ দিন বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে করোনা সংক্রণের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় এসব যানবাহনে যাত্রী উঠানামা করছে। আমরা এজন্যে সতর্কতা অবলম্বন করে এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া বেনাপোল বাজার থেকে ফুটপাতের দোকান সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পৌরসভার ছয়টি জায়গায় কাঁচাবাজার বসবে। মাছ, মাংস ও সবজি বিক্রি হবে। এতে লোকসমাগম কম ঘটবে।
বেনাপোল বাজার কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় প্রতিদিন বাজারে লোক সমাগম বন্ধের জন্য প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও মানুষ সচেতন না হওয়ার ফলে যা তাই হয়ে যাচ্ছে। এর জন্য আজ বাজার নিয়ন্ত্রন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাছ বাজার, কাঁচা বাজার ও মাংস বাজার বেনাপোল বলফিল্ডে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মামুন খান বলেন, আমরা বাজারে দীর্ঘদিন যাবত লোক সমাগম যাতে কম হয় সে চেষ্টা করেছি। কিন্তু মানুষের সচেতনতার অভাবে এটা কার্যকর হয়নি। সকালে মানুষ সেই আগের মত ভীড় জামিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাজার বেনাপোল বলফিল্ডে স্থানান্তরিত করা হলো। সড়কে ছোট যান চলাচলও বন্ধ করা হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।