কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সোমবার সকালে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৭৬ ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি হু হু করে বাড়তে থাকায় এ দুটি নদীর অববাহিকার ৫০টি চরগ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সাড়ে তিন শ চর ও নদীসংলগ্ন প্রায় সাড়ে তিন শ গ্রামের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রবল স্রোতে টিকতে না পেরে অনেকেই রাস্তা, বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তবে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে তাদের ভোগান্তি বাড়ছে। 

তিস্তার ভাঙনে উলিপুরের নাগরাকুড়া টি বাঁধের ব্লক পিচিংসহ ৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে সারডোব, নুনখাওয়া মোঘলবাসা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ১৫টি স্পটে। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে রৌমারী উপজেলা শহর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানিয়েছেন, উলিপুরের টি বাঁধসহ ভাঙনকবলিত ও ভাঙনের হুমকিতে থাকা বাঁধগুলো রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কুড়িগ্রাম ধরলা সেতুর কাছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন ভিক্ষুক সফিকুল ইসলাম।  তিনি জানান, বাঁধের পাশে সরকারি জায়গায় স্থাপিত তার বাড়িতে পানি ওঠার পর বাঁধের ওপর পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি তুলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আছেন। বৃষ্টিতে ভিজে দিনে একবেলা খেয়ে কোনোমতে টিকে আছেন। এই বাঁধে আশ্রিত অঞ্জনা বেগম জানান, তাঁর স্বামী দিনমজুর। কিন্তু বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখনও কোনো সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন করছেন। 

সরেজমিন চর জয়কুমর ও চর সারডোব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও শুকনো জায়গা নেই। সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রিত দুটি পরিবার জানিয়েছে, পানি যে গতিতে বাড়ছে, তাতে স্কুল ঘরে পানি ওঠার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এরপর কোথায় উঠবেন জানেন না তারা। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৬ শ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। চর নামা জয়কুমরের কৃষক ইনসাফুল হক জানান, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় অনেকেই এবার পাট আবাদ করেছেন, কিন্তু আগাম বন্যায় সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।