চীন থেকে বাংলাদেশের আগে বড় “খয়রাতি” নিয়েছিল ভারত।

বাংলাদেশের প্রায় ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে চীন। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই সুবিধাকে পাওয়াকে ‘খয়রাতি’ হিসেবে উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করেছে।চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের হলেও ভারতীয় মিডিয়া মনে করছে,নয়াদিল্লির সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ঢাকাকে বাগে রাখার ‘টোপ’ এটি বেইজিংয়ের।

ভারতের সংবাদ মাধ্যম জি নিউজ শিরোনাম করেছে “ভারতকে চাপে ফেলতে বাংলাদেশকে ‘খয়রাতি’ চীনের!” এছাড়া পশ্চিম বঙ্গের আরেক জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার শিরোনামে এমন শব্দচয়ন না করলেও খবরের ভেতরে লিখেছে, ‘বাণিজ্যিক লগ্নি আর খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা নতুন নয় চীনের’।

তুলনা করে দেখা গেছে,বাংলাদেশ শুল্ক সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু ভারত নিজেই ঋণ বা খয়রাতিতে ব্যাপক জর্জরিত।

উল্লেখ্য, এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টে চিনে ৩০৯৫টি বাংলাদেশ পণ্য শুল্কমুক্ত। এবার নতুন করে ছাড় দেওয়ায় চীনে শুল্কহীন হল ৮২৫৬টি বাংলাদেশি পণ্য। চীন সরকার জানিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের আর্থিক উন্নয়নে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে শুল্ক ছাড় ছাড়াও বাংলাদেশে বিনিয়োগও বাড়িয়েছে চীন। 

বৃহস্পতিবার বিজেপি অভিযোগ করেছে, ভারতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস থেকে অর্থ অনুদান পেয়েছে কংগ্রেস পরিচালিত রাজীব গান্ধি ফাউন্ডেশন। প্রথম ইউপিএ আমলে অর্থাৎ ২০০৫-০৬ সালে এই লেনদেন হয়েছে।জানা গেছে, এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধি। অন্য সদস্যরা হলেন-প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাহুল গান্ধি আর পি চিদম্বরম।

সম্প্রতি বিজেপির এমন অভিযোগের জবাবও দিয়েছে কংগ্রেস। তাদের যুক্তি,সাধারণ দাতা হিসেবে চীনা দূতাবাস ২০০৫-০৬ সালে এই অনুদান দিয়েছে।আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদের প্রশ্ন, ইউপিএ সরকার কি চীন থেকে ঘুষ নিয়েছিল?

অনুদান নেয়ার পরেই অবাধ বাণিজ্য করতে চীনা সংস্থাকে ভারতীয় বাজার ছেড়েছিল ইউপিএ সরকার। এটা কি সত্যি? এমনকী, সরকারি কোনো নথিতে এই অনুদানের প্রসঙ্গ নেই। এমনটাও অভিযোগ তুলেছেন ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কংগ্রেসের প্রতি তার প্রশ্ন, কোন খাতে সেই অনুদান ব্যবহার করা হয়েছিল? জবাবদিহি করুক কংগ্রেস।এদিকে, ভারতের বিদেশ থেকে নেয়া মোট খয়রাতির বা বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৩১ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত ৫৬৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ খয়রাতি দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশের বেশি। এই ঋণগুলো ভারত নিয়েছে বিভিন্ন মাল্টিল্যাটারাল, বাইল্যাটারাল উৎস থেকে- যার মধ্যে রয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আইডিএ, আইবিআরডি, আইএফআইডি এবং অন্যান্য জায়গা থেকে।মাল্টিল্যাটারাল উৎস থেকে ভারতের নেয়া খয়রাতি বা ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

এর বাইরে বাইল্যাটারাল উৎসের ভেতর ভারত ঋণ করেছে জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি চীন থেকেও। এসব উৎস থেকে পাওয়া ভারতের মোট ঋণ এখন ২৬.৩৩ বিলিয়ন ডলার।ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের পাবলিক; ঋণ ২০২১ অর্থবছরে ৪০ দশমিক ১২ শতাংশ হতে পারে। ফিস্কাল মনিটরের এপ্রিল ২০২০ অনুযায়ী আইএমএফ শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান এবং নেপালের গ্রস ঋণ প্রকাশ করেছে। আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের মোট ঋণ এখন তাদের জিডিপির ৭৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। এই হিসাব অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ মিলিয়ে।এত ঋণ বা খয়রাতির বিপরীতে ভারতের রিজার্ভ আছে ১২ জুন, ২০২০ পর্যন্ত ৫০৭ দশমিক ৬৪৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বিদেশ থেকে নেয়া তাদের ঋণের পরিমাণ ৫৬৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন।

উল্লেখ্য ভারতের এই রিজার্ভ তাদের স্বর্ণ রিজার্ভসহ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে তাদের ৫০৭ দশমিক ৬৪৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের ভেতর ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যাসেটসের (এফসিএ) পরিমাণ ৪৬৮ দশমিক ৭৩৭ বিলিয়ন, স্বর্ণের রিজার্ভের বাজার মূল্য ৩৩ দশমিক ১৭৩ বিলিয়ন, এসডিএআরএস ১ দশমিক ৪৫৪ বিলিয়ন এবং বাকি ৪ দশমিক ২৮০ বিলিয়ন রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কাছে।এদিকে বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণও ভারতের থেকে অনেক কম। শতাংশের হিসাবে অর্ধেক।

প্রশ্ন থেকেই যায়,বাংলাদেশ সুবিধা পেলে ভারতের মিডিয়ায় যদি তা খয়রাতি বলে আখ্যায়িত করে তবে ভারতের ঋণ কেন বড় খয়রাতি হবে না ?