নেপালে দূরদর্শন ছাড়া ভারতের সবগুলো চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে। গতকাল সকালে নেপালের শাসক দলের মুখপাত্র নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠা অভিযোগ করেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে নেপাল-বিরোধী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। 

তিনি আরো দাবি করেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অবমাননামূলক মন্তব্য করা হচ্ছে ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে। তার পরই সব ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

কবে নাগাদ আবার সেগুলোর সম্প্রচার শুরু হবে, কেবল অপারেটররা কিছু বলতে পারেননি। এর মধ্যেই ভারতের তিনটি এলাকা অন্তর্ভূক্ত করে নেপাল সরকার যে নতুন মানচিত্র পার্লামেন্টে পাস করেছে, দিল্লি তার প্রতিবাদ করে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে। 

এদিকে গতকাল সকালেই নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির যুগ্ম চেয়ারম্যান পুষ্পকমল দাহালের সঙ্গে দেখা করেছেন চীনের রাষ্ট্রদূত হোউ ইয়ানকি। 

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগ চেয়ে দলের যুগ্ম চেয়ারম্যান দাহাল সরব হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে নেপালে। 

ক্ষমতাসীন দলের ৪৪ জন সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে ৩০ জনই দাহালের পাশে দাঁড়ানোর ফলে বিপাকে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি। এই পরিস্থিতিতে ওলির চেয়ার বাঁচাতে কূটনৈতিক নিয়ম ভেঙে আসরে নেমেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

এ বছরের মে মাসের ২০ তারিখে ওলি সরকার ভারতের লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশের পর পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন করে তা অনুমোদন করিয়ে নেয়। 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব নেপালের পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক ও একতরফা’ বলে কটাক্ষ করলেও প্রতিবাদ জানানোর কথা উহ্য রেখেছিলেন। 

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছিল, লাদাখ নিয়ে চীনের সঙ্গে চড়া সুরে বিবাদের পরিস্থিতির মধ্যে দিল্লি এখনই কাঠমান্ডুর সঙ্গে মতভেদকে প্রাধান্য দিতে চায় না। নেপালের এই পদক্ষেপের পেছনে চীনের উসকানির বিষয়টিও মাথায় রেখেছে দিল্লি। কিন্তু ঘোষণা না-করেও ভারত ২৪ মে যে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে রেখেছে, পার্লামেন্টকে তা জানিয়েছে নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

বস্তুত দলে কোণঠাসা হয়েই ওলি মানচিত্র পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে জাতীয়তাবাদের ঝড় তোলার কৌশল নিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে তাৎক্ষণিক লাভ হলেও দলের নেতারা এ বার তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় সংযোজন করেছেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে কূটনৈতিক বিপর্যয় ঘটানোর। 

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, দলে কোণঠাসা ওলি ভারত-বিরোধিতাকে হাতিয়ার করে দেশে সঙ্কট ও অনাস্থা পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশন স্থগিত করে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলেছেন।

সূত্র : আনন্দবাজার