দেশে ফিরেছেন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দীর্ঘ আড়াই মাস পর । বুধবার (১৫ মে) বিকেল পাঁচটা ৫৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি অবতরণ করেন।

দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে নতুন উদ্যমে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে কাজ করার প্রত্যয় জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর হযরত শাহ জালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল বলেন, আমার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মায়ের মমতা দেখিয়েছেন। সন্তানের জন্য যা যা করতে হয় তিনি তাই আমার জন্য করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, দুই মাস ১১ দিন পর আমি সুস্থ্য হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছি। আমার জীবনটা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। আমি বাঁচব কি বাঁচব না, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলাম আমি। আমি যখন অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী ছিলাম, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নাম ধরে ডেকেছেন। আমি তখন চোখ খুলে তাকিয়েছিলাম। জীবন হলো পানির স্রোতের মতো। আমি এই শিক্ষা গ্রহণ করেছি।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি, সে শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য আমৃত্যু কাজ করে যাব’, উল্লেখ করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, মানুষের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টিম ওয়ার্ক করে যাব। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করব। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য বাইরে থাকার পরও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা টিম ওয়ার্ক করেছিল। সেজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ওবায়দুল আরও বলেন, একজন রাজনীতিকের সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের ভালোবাসা। আমি আমার কাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমে তা অর্জন করতে পেরেছি। মানুষের ভালোবাসায় এবং দোয়ায় আজ ২ মাস ১১ দিন পর আমি দেশে ফিরতে পেরেছি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা কোরআন শরিফ পড়ে আমার জন্য দোয়া করেছেন। তার কাছেও আমার কৃতজ্ঞতা।

‘নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। যদিও সেই সময় আমি আমার মধ্যে ছিলাম না। আমি শুনেছি শেখ হাসিনা হাসপাতালে আমাকে নাম ধরে ডেকেছিলেন। আমি নাকি কেবল তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম।’

নতুন উদ্যোমে নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত বরে তিনি বলেন, আমি না থাকার পরও নেতাকর্মীরা ইউনিটি ধরে রেখে যেভাবে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন তা আমায় অভিভূত করেছে। আমরা এভাবেই শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবো।

এর আগে বিকেল বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে কাদেরকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ০৮৫ নম্বর ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে। এর আগে থেকেই বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে জড়ো হন হাজার হাজার নেতাকর্মী। এ সময় তাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান তারা।

স্থানীয় সময় ৪টা ১০ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে বিমানের ফ্লাইটটি।

৬৯ বছর বয়সি ওবায়দুল কাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ সিওপিডিতে ভুগছিলেন। গত ২ মার্চ ভোরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকার বিএসএমএমইউতে ভর্তি হলে এনজিওগ্রামে ওবায়দুল কাদেরের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করেন চিকিৎসকরা।

অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে ভারতের স্বনামধন্য হৃদরোগ সার্জন দেবী শেঠির পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৪ মার্চ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। ভর্তি করা হয় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।

পরে গত ২০ মার্চ ওই হাসপাতালে তার বাইপাস সার্জারি করেন মেডিকেল বোর্ডের সিনিয়র সদস্য কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ডা. সিবাস্টিন কুমার সামি। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে গত ২৬ মার্চ ওবায়দুল কাদেরকে হাসপাতালের আইসিইউ থেকে কেবিনে নেয়া হয়।

সিঙ্গাপুরে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মিণী ইসরাতুন্নেসা কাদের, এপিএস মহিদুল হক, সেতু বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ ফাইয়াজ, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সুখেন চাকমা, ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মনসুরুল আলমসহ ঘনিষ্ঠ কয়েকজন।