আমেরিকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসির মধ্যে কোনোভাবেই মতের মিল হচ্ছে না। ধীরে ধীরে ট্রাম্প ও ফাউসির এই দ্বন্দ্ব চরমে উঠে যাচ্ছে।এ কারণেই হোয়াইট হাউস বিশেষভাবে কড়া নজরে রেখেছে ফাউসিকে। ১৩ জুলাই সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
১১ জুলাই এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ফাউসি বেশির ভাগ সময় ভুল করছেন, এ নিয়ে হোয়াইট হাউসের বেশির ভাগ কর্মকর্তা বেশ উদ্বিগ্ন। তিনি করোনা মহামারি শুরুর সময় থেকে নানা সময়ে ফাউসির সাক্ষাৎকারের বক্তব্য উল্লেখ করে দীর্ঘ উদাহরণ তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা নিয়ে ফাউসি নানা সময়ে নানা মন্তব্য করেছেন। কিন্তু হোয়াইট হাউসে আসার পর তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা করেন না। দেশের এই দুই শীর্ষ ব্যক্তি করোনাভাইরাস নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন, যা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। যেমন গত মার্চে ফাউসি বলেছিলেন, মাস্ক পরে মানুষের হাঁটাচলা উচিত নয়। আর এখন তিনি বলছেন মাস্ক পরতে।
সম্প্রতি সংবাদপত্র ও রেডিওতে দেওয়া কিছু সাক্ষাৎকারে আমেরিকার ছয়জন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করা দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ফাউসি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘একটি দেশ হিসেবে যখন আপনি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা করবেন, আমি ভাবতেই পারি না, তখন আপনি বলতে পারেন যে আমরা খুব ভালো কিছু করছি। আসলে বোঝাতে চাইছি, আমরা মোটেই ভালো করছি না।’
অন্য একটি সাক্ষাৎকারে ফাউসি বলেন, প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, আমেরিকার ৯৯ শতাংশ করোনার সংক্রমণ একদম ক্ষতিকর নয়। প্রেসিডেন্ট এই নম্বর ও হার কোথায় পেয়েছেন, তা জানেন না ফাউসি।
এসব ঘটনায় দেশটির জাতীয় টেলিভিশনে ফাউসির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, ‘ফাউসি খুব খুব ভালো মানুষ, তবে তিনি অসংখ্য ভুল করেন।’ ৭ জুলাই অন্য এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা এখন ভালো অবস্থানে আছি। আমি তাঁর (ফাউসি) সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোয়াইট হাউসের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, হোয়াইট হাউসের অনেক কর্মকর্তাই ফাউসিকে বিশ্বাস করেন না। কারণ, তাঁরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে ফাউসির কোনো আগ্রহ নেই। আর তিনি এখন সবখানে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন।
হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ ১২ জুলাই বলেছেন, ফাউসিকে সরিয়ে দেওয়া বা তাঁকে অসম্মানিত করতে হোয়াইট হাউসের যেকোনো প্রচেষ্টা হবে নিষ্ঠুরতার শামিল। সিএনএনকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভাবছেন, আমেরিকার মানুষ ট্রাম্পকে নয় বরং ফাউসিকে বিশ্বাস করেন। আর এ কারণেই হয়তো তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় দেশটির হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসের সেক্রেটারি ক্যাথলিন সেবেলিয়াস বলেন, আমেরিকার সঙ্গে অন্য দেশগুলো যখন করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে, ঠিক এই সময় ফাউসিকে সরিয়ে দেওয়া বা অন্য যেকোনো বিজ্ঞানীকে অসম্মান করা অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয় হবে।