গত দুই দিনে সিরাজগঞ্জে যমুনার তীব্র স্রোতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের শিমলা এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। আকস্মিক শুরু হওয়া এই ভাঙনে প্রায় ২ শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের আরো কয়েকটি গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা জীবন বাঁচাতে সব কিছু ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। যমুনার অব্যাহত ভাঙনে এলাকাবাসীর মধ্যে নদী ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, যমুনার আগ্রাসী ভাঙনের কবলে পড়ে বসতবাড়ি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচ ঠাকুরী এলাকার অন্তত ২ শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া নতুন করে ভাঙনের আশংকায় ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ব্যস্ত রয়েছে অন্তত শতাধিক পরিবার। মাঝে মাঝে তীব্র রোধ আর দমকা বৃষ্টির দাপটে চরম অসহায় অবস্থায় রয়েছেন বাঁধে আশ্রিত এই সব পরিবার। এদিকে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে এসে পানি সম্পদ সচিব জানালেন, আরো অন্তত দু’বছর অপেক্ষা করতে হবে সুদিনের জন্য। 

শুক্রবার দুপুরে আকস্মিক যমুনার পানির প্রবল তোড়ে ধসে পড়ে শিমলা বাধের স্যাঙ্ক। মূহুর্তেও মধ্যে  বিলীন হয়ে যায় অন্তত শতাধিক বসতবাড়ি। এরপর থেকে শনিবার পর্যন্তও এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। আর এ ভাঙনের কবলে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে আরো শতাধিক পরিবার। নিজেদের সম্পদ রক্ষায় ভাঙন কবলিত মানুষেরা রাতভর নিজেদের সংসারের যাবতীয় জিনিস এনে জড়ো করেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর।

শনিবার সকালেও একই চিত্র ছিল পাঁচঠাকুরীসহ আশপাশের এলাকার। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উঁচু স্থানই এখন তাদের ঠিকানা। খোলা আকাশের নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে এখন তারা বসবাস করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ জনপ্রতিনিধি আর প্রশাসনের কর্তারা মুখে সাহায্যের বুলি আওড়ালেও তাদের সাহায্যে কেউই এগিয়ে আসেনি।

ভাঙনের কবলে সর্বস্ব হারানো দিনজমুর সাহেদ মোল্লা জানান, গতকাল হঠাৎ করেই নদী ভাঙন শুরু হলে ঘড়-বাড়ি থেকে কিছুই বের করতে পারি নাই। চোখের সামনে এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল।

আরেক বাসিন্দা সেলিম রেজা জানান, হঠাৎ করেই চারিদিক থেকে চিৎকার শুনতে পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি পানির স্রোত ধেয়ে আসছে। কিছু না বোঝোর আগেই সব শেষ। কোনো মতে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন বাঁচিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পেরেছি। এখন আশ্রয় খোলা আকাশের নিচে।

একই গ্রামের ময়না খাতুন জানান, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে এখন রয়েছি খোলা আকাশের নিচে। এখন কোথায় যাবো কি করবো ছেলেমেয়েদের নিয়ে? কি খাবো তারও কোনো ঠিক নেই। এখন পর্যন্ত আমাদের পাশে কেউ এগিয়ে আসেনি। 

ছোনগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল আলম জানান, গত দুই মাস যাবৎ পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলেও পানি বৃদ্ধির কারণে তা বিফলে গেছে। এখন ভাঙনের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে।

এদিকে শনিবার ভাঙন কবলিত মানুষদের দেখতে আসেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। এ সময় তিনি বলেন, বিগত সময়ে স্পারের ডিজাইনে ত্রুটি থাকায় তা বারবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। আর এ থেকে পরিত্রাণ পেতে আরো ২ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি এই অঞ্চলের ভাঙন কবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলার কাজীপুর, সদর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদীভাঙন ও পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধপানির সংকট দেখা দিয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার জানান, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের আপাতত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।