টাপেন্টাডল ট্যাবলেট। নেশায় বুঁদ হওয়া যায়, এ কারণে সদ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে ট্যাবলেটটি। বাজারে তদারকি না থাকায় ইয়াবা ও হেরোইনের বিকল্প হিসেবে অভিজাত পরিবারের সদস্যরা এখনো টাপেন্টাডল ট্যাবলেটের নেশায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রাজধানীর অভিজাত গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমণ্ডি ও রমনা এলাকায় এই নেশার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। যাঁরা ব্যবহার করছেন তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সারা দেশেও ব্যথানাশক এই ট্যাবলেট মাদক হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম বলেন, অভিজাত এলাকায় এই টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ইয়াবা-হেরোইনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে ধনীর দুলালরা। এমন তথ্য পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এটা যেন কেউ গোপনে বা প্রকাশ্যে বিক্রি করতে না পারে সে ব্যাপারে আলাদা দল কাজ করছে। তিনি বলেন, এখন এটা মাদকের তালিকাভুক্ত। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের তালিকাভুক্ত করে গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি একটি চুরির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কয়েকজন কিশোর চোরকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জানতে পারি, ওষুধটি ইয়াবা ও হোরোইনের বিকল্প হিসেবে তারা ব্যবহার করছে। এরপর তদন্তে নেমে রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এই ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে।’

ধরা পড়া কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে ডিবি জানতে পেরেছে, তারা ইয়াবা ও হেরোইনের মতোই ট্যাবলেটটি গুঁড়ো করে সেবন করত। তাদের মতো আরো অনেক কিশোর-তরুণ এই ট্যাবলেট দোকান থেকে কিনে মাদক হিসেবে ব্যবহার করে।

কমলাপুর রেলস্টেশন, বিভিন্ন উদ্যানে খোঁজ নিয়ে এই ট্যাবলেট মাদক হিসেবে সেবনকারী কয়েকজন তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বড় ভাইদের মাধ্যমে এই ট্যাবলেট পেয়ে থাকে। এ সময় এক কিশোর বলে, ‘হারাদিন রাস্তাঘাটে থাহি, কাগজ, প্লাস্টিক টোকাইয়া যে টাহা পাই তা দিয়ে বড় ভাইদের কাছ থাইকা এই ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদক কিনে খাই।’

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, নিষিদ্ধ হলেও এটা বিক্রি হচ্ছে কি না তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এত দিন এটা ওষুধ হিসেবে ছিল। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর এটা এখন মাদক। তাই যারা এখনো এই ট্যাবলেট মুজদ রেখেছে, বিক্রি করছে বা বিক্রি করার চেষ্টা করছে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কম্পানি বিভিন্ন নামে এই ট্যাবলেট উৎপাদন করে। কম্পানিভেদে একেকটি ট্যাবলেটের দাম ১২ থেকে ১৭ টাকা। দাম কম ও সহজে পাওয়া যায় বলে এই ব্যথানাশক ট্যাবলেট নেশার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহারের খবর কয়েক বছর ধরেই গণমাধ্যমে আসছিল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, নিষিদ্ধ হওয়ার পর কোনো কোনো কম্পানি এরই মধ্যে টাপেন্টাডল ট্যাবলেটের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

এদিকে পুলিশ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে নিষেধাজ্ঞার পরও টাপেন্টাডল ও মিথাইল হাইড্রোক্লোরাইড জেনেরিক নামের বিভিন্ন কম্পানির ওষুধ ফার্মেসিতে দেদার বিক্রি হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নজরদারি না থাকায় এখনো বিক্রি হচ্ছে এসব ওষুধ। যেহেতু এখন নিষিদ্ধ হয়েছে, তাই মার্কেট থেকে এই ট্যাবলেট তুলে না নিলে এটিই নেশাজাতীয় ট্যাবলেট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যেতে পারে।

অনেক আগে থেকেই এই ট্যাবলেট মাদক হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে জানতে পেরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়। অভিজাত শ্রেণির পাশাপাশি ভবঘুরে কিশোর, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এরই মধ্যে এই ট্যাবলেটকে নেশার উপকরণ বানিয়ে ফেলেছে।