করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি চাকরির বিজ্ঞাপন দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এই সময়টা পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। তবে সুযোগটা সবাই পাবেন না। যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ২৫ মার্চের আগে চাকরির বিজ্ঞাপনের ছাড়পত্র নিয়েছিল, কিন্তু কভিডকালীন ছুটি শুরু হওয়ার কারণে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারেনি, শুধু সেসব চাকরিতে আবেদনকারীরাই বয়স ছাড়ের সুযোগ পাবেন।
ওই শর্ত পূরণ করে যাঁরা সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করবেন, তাঁরা বয়স ছাড়ের সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ ওই সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য ২৫ মার্চ, ২০২০ তারিখ পর্যন্ত যাঁদের বয়স ৩০ বছর ছিল, তারা সেসব সরকারি নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে ওই শর্তসংবলিত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসংক্রান্ত নির্দেশনা এলে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র কালের কণ্ঠকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, যেসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রকাশে ছাড়পত্র নেয়নি, তাদের জন্য এই সুযোগ প্রযোজ্য হবে না।
এর কারণ উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এটা খুবই জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনো না কোনো জায়গা থেকে সীমারেখা টানতেই হবে। তাই যারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কোনো উদ্যোগ নেয়নি, তাদের জন্য এই সুযোগ দেওয়া যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। কভিডের কারণে অনেক কিছুই তো থেমে গেছে। এর কোনো কিছুই ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই যেসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তির জন্য ছাড়পত্র নিয়ে রেখেছিল, শুধু তাদের জন্যই এই সুযোগ রাখাটা যুক্তিযুক্ত মনে করা হচ্ছে। আর উন্মুক্তভাবে সবার জন্য এই সুযোগ রাখতে গেলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে।
মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্রের মতে, প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা দেন তাহলেই শুধু সেটা পরিবর্তন হতে পারে। না হলে এ প্রস্তাবই বহাল থাকবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল বুধবার বলেন, ‘সরকারি চাকরির যেসব বিজ্ঞপ্তি করোনাকালীন ছুটি শুরুর আগে তৈরি ছিল শুধু সেসব বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে বয়স ছাড়ের চিন্তা চলছে। বিষয়টি শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব লাইসুর রহমান গত মঙ্গলবার বলেন, ‘২৫ মার্চের আগে যারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য প্রস্তুত ছিল তাদের জন্য এ সুযোগ থাকছে। আমার যতটুকু মনে আছে, এ ধরনের প্রস্তাবই আমরা পাঠিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য উল্লিখিত বয়স ছাড় কোনো কাজে আসবে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে বিসিএসের নিয়োগের চাহিদা পিএসসিতে পাঠানো হয়। তাই আসন্ন বিসিএস নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স ছাড়ের আশা নেই। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২৫ মার্চের আগে আমাদের কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রস্তাব ছিল কি না আমি নিশ্চিত বলতে পারছি না। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, আমরা তা-ই অনুসরণ করব।’
করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে কয়েক দফা বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত টানা দুই মাসের বেশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক কার্যক্রমের দিকে এগোচ্ছে দেশ। সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে সব কিছুতেই স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এখনো পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তই বহাল আছে।