ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী বাদী হয়ে রাজধানীর লালবাগ থানায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সহযোগিতার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ পায়। মূল ধারার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সরাসরি ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়েছে বলে খবরে জানানো হয়েছে। কিন্তু মামলার এজাহারে স্পষ্ট হয়, ভিপি নূরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়নি। 

মামলার এজাহারের ছবিসহ দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সংশ্লিষ্ট সংবাদের লিঙ্ক প্রকাশ করে খবরটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বিডি ফ্যাক্ট চেক। সেখানে বলা হয়েছে, নূরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়নি। ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ এর অভিযোগ করা হয়েছে হাসান আল মামুন নামে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক নেতার বিরুদ্ধে। হাসানের বিষয়ে নুরের কাছ বিচার চেয়ে না পাওয়ার এবং নানাভাবে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ভিকটিমকে চাপ দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমে মূল আসামির প্রসঙ্গকে পেছনে ফেলে বিভ্রান্তিকরভাবে নূরের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণের অভিযোগে মামলা’ হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

এহজারে মামলার বাদী বলেছেন, ‘উপায়ন্তর না দেখে এই বিষয়ে ২০/৬/২০২০ তারিখে ৩ নং বিবাদী নুরুল হক নূরকে মৌখিকভাবে জানালে সে বলে অভিযুক্ত ব্যক্তি (মামুন) আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সাথে বসে একটি সুব্যবস্থা করে দিব। এরপর তিনি ২৪/০৬/২০২০ তারিখে মিমাংসার আশ্বাস দিয়ে আমার সাথে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু তখন তিনি মীমাংসার আশ্বাস এড়িয়ে আমাকে এই বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আর আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তাদের ভক্তদের দিয়ে আমার নামে উলটাপালটা পোস্ট করাবে। এবং আমাকে পতিতা বলে তারা প্রচার করবে তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.২ মিলিয়ন মেম্বারসম্পন্ন গ্রুপে। তিনি আরো বলেন, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতিমধ্যে মামলার ৪ নং আসামী সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটাতে ৫ও ৬ নং বিবাদীকে লাগিয়ে দেয় চ্যাটগ্রুপে (মেসেঞ্জারে) আমার চরিত্র নিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার মত সম্মিলিতভাবে হীনকাজ করে। ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃস্থানীয় প্রায় সকল নেতাকর্মী এসব ঘটনা সম্পর্কে জানেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিষয়টিকে সুষ্ঠ সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও বিবাদীরা তাদেরকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যা দেয় বলে আমি জানতে পারি।’

প্রসঙ্গত, গত ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী লালবাগ থানায় এ মামলাটি করেন। মামলায় মোট ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণে সহযোগিতাকারী হিসেবে নুরুল হক নূরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে। ধর্ষণের স্থান হিসেবে লালবাগ থানার নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ রোডে হাসান আল মামুনের বাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাদী শিক্ষার্থী ঢাবির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকেন।

পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় ‘হয়রানিমূলক মামলা’র প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নূরকে আটক করা হয়। সন্ধ্যার দিকে ধর্ষণ মামলার প্রতিবাদে ভিপি নূর ও তার সহযোগীরা শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তারা পুলিশের কাজে বাধা দিলে মৎস্য ভবন এলাকা থেকে নুরুল হক নুরসহ ৬ জনকে আটক করা হয়।