আজ শুক্রবার থেকে অর্ধেক আসনে দর্শক বসার শর্তে খুলে যাচ্ছে সিনেমা হল। এই শর্তে সিনেমা হল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। চলমান কভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের জনজীবনসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে স্থবিরতা। এরই অংশ হিসেবে সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ সাত মাস পর শুক্রবার সিনেমা হল খুললেও থাকছে না সেই অর্থে কোনো নতুন ছবি, খুলছে না ঢাকার বড় বড় সিনেমা হল। ‘সাহসী হিরো আলম’ নামের একটি স্বল্প বাজেটের ছবি মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এর প্রযোজক আশরাফুল আলম।
অথচ এত দিন ধরে বন্ধ থাকা সিনেমা হলগুলো চালুর দিনে ইন্ডাস্ট্রিকে গতিশীল করার জন্যই প্রথম থেকেই নতুন ছবি মুক্তি ও ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা। উদ্যোগ না থাকায় নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে না, আর আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিতে হল মালিকরাও সিনেমা হল খুলতে চাইছেন না। এর ফলে দেশীয় সিনেমা চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন হল মালিক ও প্রযোজক সমিতির নেতারা।
প্রযোজক পরিবেশক সমিতির হিসাব মতে, মুক্তির অপেক্ষায় আছে ২৪টি সিনেমা। কিন্তু ১৬ অক্টোবর হল খুললেও করোনা মহামারির কারণে নতুন ছবি মুক্তি দিতে চাইছেন না পরিচালক, প্রযোজকরা। বলা যায়, পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই বিশাল লগ্নির ছবি মুক্তি দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। সিনেমা হল খোলার এক-দুই মাস পর এসব সিনেমা মুক্তি দিতে ইচ্ছুক প্রযোজক,পরিচালকরা।
স্বাস্থবিধি মেনে সিনেমা হল খোলার বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক-তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ বলেন, ‘কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সিনেমা হলের আসনসংখ্যা কমপক্ষে অর্ধেক খালি রাখার শর্তে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘দেশে এই মুহূর্তে খোলার মতো সিনেমা হল রয়েছে ১১৫টি। এর মধ্যে ৩০-৩৫টি হলের করোনার সাধারণ ছুটির সময় বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় সংযোগ কর্তন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত এসব হল খুলতে পারছেন না তাঁরা। এর ফলে সিনেমা হল খুলছে ৭৫ থেকে ৮০টি।
নতুন ছবি মুক্তি না পাওয়ার বিষয়ে খসরু বলেন, সিনেমা হল খোলা শুরু চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে গতিশীল করার উপায় ছিল। প্রয়োজন ছিল প্রযোজক সমিতি, হল মালিক সমিতি ও সরকারকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় মিটিং। নতুন নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেকসংখ্যক আসন পূর্ণ করে সিনেমা হলগুলো চলবে। এতে করে যদি কোনো নতুন সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে তার রেন্টাল উঠবে না। হল মালিক উঠাতে পারবেন না খরচ, প্রযোজক উঠাতে পারবেন না তার লগ্নি। যার ফলে নতুন ছবি মুক্তি দিতে রাজি নন প্রযোজকরা।
এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায়ও বাতলে দিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ত্রিপক্ষীয় মিটিংয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে গতিশীল করা সম্ভব। যেহেতু অর্ধেক আসনে সিনেমা হলগুলো চলবে, সেহেতু বাকি অর্ধেক আসনের ভর্তুকি বা প্রণোদনা সরকারকে দিতে হবে। এতে করে নতুন নতুন ছবি প্রযোজকরা মুক্তি দিতে এগিয়ে আসবেন।’
এদিকে রাজধানীর অন্যতম সিনেমা হল মধুমিতা খুলছে না। এর কারণ হিসেবে হলের মালিক ও হল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা দুই সপ্তাহের জন্য সিনেমা হল খুলতে চাই না। নতুন সিনেমা নেই, আমরা চালাব কী? এমনিতেই আমাদের নাইট শো গুলো বন্ধ রাখতে হয় প্রায়ই, পাঁচ-সাতজন থাকে দর্শক। এভাবে হল চলে? এর মধ্যে নতুন ছবি ছাড়া তো হল খোলার উপায় নেই। পুরনো ছবি দিয়ে আমার হলের খরচই উঠবে না। সরকার আমাদের নতুন ছবি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে আমরা হল খুলব, আপাতত খুলছি না- এটাই চূড়ান্ত।
রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র শ্যামলী সিনেমাও খুলছে না। হলের ব্যবস্থাপক আহসানুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আপাতত সিনেমা হল খুলতে পারছি না। যেহেতু নতুন সিনেমা নেই, আমরা হল খুলে আমাদের খরচ উঠাতে পারব না। এসি চালাতে হবে, বিদ্যুৎ খরচ, ক্লিনার বাড়াতে হবে- এসবের খরচ উঠবে না। কর্তৃপক্ষ এক-দু সপ্তাহ দেখবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।’
প্রায় একই কারণে রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলও খুলছে না। হলের ব্যবস্থাপক শাহীন হোসেন বলেন, ‘আমরা আপাতত সিনেমা হল খুলছি না। এখনো আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা কিছুদিন দেখব, তারপর ভেবে সিদ্ধান্ত নেব। এ ছাড়া ঢাকার অভিসার সিনেমা হলও খুলছে না।
তবে রাজধানীর বাইরে দেশের বৃহৎ সিনেমা হল যশোরের মণিহার খুলছে আজ। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ সিনেমা হল জয়পুরহাটের ‘পৃথিবী কমপ্লেক্স’ও খুলছে আজ। সেখানে সাহসী হিরো আলম ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে, এ ছাড়া একই শহরের নাজমা সিনেমা হলে ‘নষ্ট ছাত্র’ মুক্তি পাচ্ছে।