ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর পদ থেকে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধর এবং বাড়ি তল্লাশির পর র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, দণ্ডিত হওয়ার বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিবেদন পেলে তাঁর (ইরফান সেলিম)  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি বরখাস্ত হবেন। স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, কেউ সাজা প্রাপ্ত হলে তিনি বরখাস্ত হবেন।

রাজধানীর কলাবাগান ট্রাফিক সিগন্যালের অদূরে একটি মোটরসাইকেলকে জিপ গাড়ির ধাক্কা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনাটির সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যার পর। একপর্যায়ে ‘সংসদ সদস্য স্টিকার’ লাগানো গাড়িটি থেকে নেমে আরোহীরা মোটরসাইকেল আরোহী নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এই অভিযোগে গাড়ির আরোহী ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজি মো. সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ ইরফান সেলিম, গাড়িচালক মিজানুর রহমান ও দেহরক্ষী জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইরফান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

গতকাল সোমবার (২৬ অক্টোবর) পুরান ঢাকার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইরফানকে মদ্যপানের জন্য এক বছর এবং অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখার দায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। দেহরক্ষী জাহিদকে ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডের পর তাঁদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইরফান ও তাঁর সহযোগীরা গাড়ি থেকে নেমে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খানকে মারধর করার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ রেঞ্জ রোভার ব্র্যান্ডের গাড়িটি জব্দ করে চালক মিজানুর রহমানকে আটক করলে রাতভর চলে সমঝোতার চেষ্টা। রাতে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পর গতকাল সকালে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ বাদী হয়ে ইরফান সেলিমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। গতকাল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত টানা ১০ ঘন্টা পুরান ঢাকায় হাজি সেলিমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মদ, ইয়াবা, বিয়ার, ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ ইরফান ও জাহিদকে গ্রেপ্তারের পর ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দেন। রাতে বাড়ির পাশে আরেকটি ভবনে অভিযান চালিয়ে ইরফান সেলিমের একটি টর্চার সেলের সন্ধান পান র‌্যাব কর্মকর্তারা। সেখান থেকে হাড়, ওয়াকিটকি, দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, অস্ত্র, ইয়াবাসহ অন্য আলামত উদ্ধারের ঘটনায় ইরফানের বিরুদ্ধে অন্তত দুটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। সিসি ক্যামেরায় পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ ও টর্চার সেল চালানোসহ ইরফানের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে র‌্যাব।

গতকাল দুপুরে হাজি সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমানের আদালত এক দিনের রিমান্ড আদেশ দেন।

এছাড়া আজ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) ভোরে ইরফানের ব্যক্তিগত সহকারী এ বি সিদ্দিক দীপুকে (৪৫) টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তিনি মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি।