করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বিদেশফেরত যাত্রীদের কভিড নেগেটিড সনদ বাধ্যতামূলক করল সরকার। এর ফলে এখন থেকে দেশে আসতে চাইলে অবশ্যই ৭২ ঘণ্টা আগের করোনামুক্তির সনদ লাগবে। যেসব যাত্রী সনদ জোগাড় করতে পারবেন না তাঁদের টিকিট-ভিসা থাকলেও বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করবে না সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নতুন নির্দেশনায় সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকায় শুরু হওয়া করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ যাতে বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্কতামূলক কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। তবে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে সনদ ছাড়াই যাত্রী দেশে আসছে। এ অবস্থায় দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে ‘ঝুঁকি বাড়াচ্ছে আকাশপথ’ এবং ‘বিমানবন্দরে ঢিলেঢালা করোনা স্বাস্থ্যবিধি’ শিরোনামে কালের কণ্ঠে ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরই বিদেশফেরত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার জন্য কোয়ারেন্টিন সেন্টারেই আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি বসানোর এবং সনদ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদ আগেই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু বিদেশফেরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ক্ষেত্রে করোনা নেগেটিভ সনদ আনার কথা বলা হলেও বাধ্যতামূলক ছিল না। যদি কেউ সনদ না নিয়ে আসেন তাহলে তাঁকে দেশে এসে লক্ষণ অনুযায়ী হোম কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হতো। কিন্তু সম্প্রতি সনদ ছাড়া যাত্রী আসার হার বাড়তে থাকে। শুধু নভেম্বরেই চার হাজারের বেশি যাত্রী আসেন করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া। তাই এই আগমনের রাশ টানতে এবার সনদ বাধ্যতামূলক করা হলো।

সূত্র জানায়, গত ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন এয়ারলাইনস সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে বেবিচকের সদস্য, ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী এম জিয়াউল কবীর স্বাক্ষরিত নতুন নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। নতুন নির্দেশনায় কূটনৈতিক ও ইউএন মিশনের সদস্যদের ক্ষেত্রেও পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে যেসব দেশে পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা নেই, সেখান থেকে অ্যান্টিজেন কিংবা গ্রহণযোগ্য কোনো করোনা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তবে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা শিথিল করা হয়েছে।

জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সার্কুলার আমরা পেয়েছি। আগামী শনিবার থেকে করোনা সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে টার্কিশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক এজেন্ট এজাজ কাদরি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বেবিচকের নতুন নির্দেশনা সব স্টেশনকে জানিয়ে দিয়েছি। করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া ৫ ডিসেম্বর থেকে বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করা হবে না।’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে বিদেশফেরত যাত্রীদের ৭২ ঘণ্টা আগের কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনায় কূটনৈতিক ও ইউএন মিশনের প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রেও সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতির ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় হতে পারে। বিমানবন্দরে আসার পর কোনো উপসর্গ না থাকলে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। আর লক্ষণ থাকলে হাসপাতাল কিংবা আইসোলেশনে (প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন) পাঠানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘গতকালও দুজন বিদেশগামী যাত্রীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আসার ক্ষেত্রেও আমরা সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক আছি।’ 

বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে বাহরাইন, চীন, কুয়েত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ. ওমান, কাতার, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের করোনা সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাঁরা বাংলাদেশে আসবেন তাঁদের ফ্লাইট সময়ের ৭২ ঘণ্টা আগের পিসিআরনির্ভর কভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। দেশে এসে বিমানবন্দরে এটি দেখাতে হবে।

কিন্তু যেসব দেশে করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত সুবিধা নেই সেখান থেকে আসা বাংলাদেশি শ্রমিক যাঁরা জনশক্তি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কার্ডধারী, বিকল্প কোনো স্বাস্থ্যগত সনদ দেখাতে হবে। যেমন—অ্যান্টিজেন টেস্ট অথবা গ্রহণযোগ্য অন্য কোনো কভিড-১৯ সনদ।