কিরগিজ তরুণদের বাধা পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে পাওয়া আত্মঘাতী গোলটি ধরে রেখেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সোহেল রানারা। ব্যবধান ন্যূনতম হলেও ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে এর গুরুত্ব অনেক। পরের ম্যাচে কিরগিজদের নেপাল হারিয়ে দিলে বাংলাদেশের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে নেপালের মুখোমুখি হওয়ার আগেই। কিরগিজদের বিপক্ষে স্বাগতিকদের সেই জয় আশা করাই যায়, অন্তত গতকালের ম্যাচের পর।

কাল বাংলাদেশের প্রথমার্ধটা ছিল বেশ গোছানো। বল পায়ে ছিল কিরগিজদের চেয়ে বেশি, আক্রমণও ছিল বেশি। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়েই আক্রমণে উঠছিলেন জেমি ডের শিষ্যরা। তাতে গোলের সুযোগও তৈরি হয়। দ্বিতীয় মিনিটেই হাবিবুর রহমানের ফ্রি কিকে দ্বিতীয় পোস্টে বিশ্বনাথ ঘোষ ঠিকঠাক লাইনে থাকতে পারলে কাজ হতো। ১৩ মিনিটে ডান দিকে বক্সের ঠিক ওপরে আবারও ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ, সেখান থেকে হাবিবুরের শট ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ক্লিয়ার করেন কিরগিজ গোলরক্ষক। ২৯ মিনিটে সেই গোল। বক্সের ওপর কিরগিজদের একটি ভুল পাস থেকে ডান দিকে বল পেয়ে যান সাদ উদ্দিন, দ্রুতই উঠে ক্রস ফেলেছিলেন পোস্টের মুখে মেহেদী হাসানকে। কিন্তু মাঝখানে কিরগিজ ডিফেন্ডার কুমারবাজ সেই বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে ঠেলেছেন।

এই মাঠেই গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ এশীয় গেমসে ভয়াবহ শুরু হয়েছিল জেমি ডের দলের ভুটানের কাছে হেরে। এবার ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের শুরু থেকে ভালো করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী বাংলাদেশ ম্যাচের বাকি সময় গোলটা ধরে রাখতে যা করার সবই করেছে। গোলের পরপরই কাউন্টার অ্যাটাক ছিল কিরগিজস্তানের। ফরোয়ার্ড তাপায়েভ ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে আনিসুর রহমানের পরীক্ষা নিয়েছেন। বসুন্ধরা কিংস গোলরক্ষক বেশ কাছ থেকে নেওয়া সেই শট ফিরিয়ে দেওয়ার পর বরুবাভের নেওয়া ফিরতি শটে বাধা হয়ে দাঁড়ান বিশ্বনাথ। বাঁ প্রান্তে অভিষিক্ত রিমন হোসেনও আস্থা নিয়ে খেলেছেন এই ম্যাচে।

আগের দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ীই দল নামিয়েছিলেন জেমি। রিমনের পাশাপাশি অভিষেক হয়েছে মেহেদী হাসান ও হাবিবুরের। ফরোয়ার্ড লাইনে মতিন ও মেহেদীতে বোঝাপড়ার অভাবটা অবশ্য দেখা গেছে। তবে মতিন নিজে বরাবরই অস্বস্তি হয়ে ছিলেন কিরগিজ ডিফেন্ডারদের জন্য। বিরতির পর পর ডান দিক থেকে দারুণ ড্রিবলিংয়ে একজনকে কাটিয়ে বল ছেড়েছিলেন সোহেল রানাকে, কিন্তু ব্লক হয়েছে সোহেলের শট।

১-০তে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধের মিনিট দশেকের মাথায় অবশ্য একযোগে তিনটি বদল এনেছেন জেমি। তিনি মিডফিল্ডে মাশুক মিয়াকে তুলে নামিয়েছেন জামাল ভুঁইয়াকে, বিপলুর জায়গায় রাকিব হোসেনকে, ওদিকে ডিফেন্সে হাবিবুরের বদলে নামিয়েছেন অভিজ্ঞ রিয়াদুল হাসানকে। কিন্তু এই তিন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সংযোজনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধানটা বাড়াতে পারেনি, উল্টো চাপে পড়েছিল। মিডফিল্ড ও ফরোয়ার্ড লাইনে খেলোয়াড় বদলে কিরগিজরাও ছিল গোল শোধে মরিয়া। জেমি চতুর্থ বদল আনেন ফরোয়ার্ড মেহেদীর জায়গায় আরেক মিডফিল্ডার মানিক হোসেনকে নামিয়ে। নেমেই অবশ্য গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন মানিক। বাঁ দিক দিয়ে দ্রুত ওপরে উঠে মতিন তাঁকে বল ছেড়েছিলেন, কিন্তু গতির মাঝে বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। কিরগিজ অর্ধে বাংলাদেশের আধিপত্য ওখানেই শেষ। বাকি সময়ে কিরগিজদের আক্রমণ সামলাতে ঘামই ঝরাতে হয়েছে জামাল ভুঁইয়াদের। ডান দিকে বক্সের একটু বাইরে ফাউল করে সাদ একবার বিপদ ডেকে আনেন। সেখান থেকে নেওয়া ফ্রি কিক দারুণ হেডে ক্লিয়ার করেছেন রিয়াদুল। অতিরিক্ত সময়ে একাধিক কর্নার পায় কিরগিজস্তান, তাতে গোল শোধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ভালোভাবেই। তেমনি একটি কর্নারে কিরগিজ নাম্বার নাইন বলটা পোস্টে রাখতে পারলেই গোল পেতেন, কিন্তু তা পারেননি।

ম্যাচ শেষে কিরগিজ কোচও বলেছেন, ‘প্রথমার্ধে আমার দল আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে সামর্থ্য অনুযায়ী সেই পারফরম্যান্সটা পেয়েছি, কিন্তু গোল মিসে শেষ পর্যন্ত সমতায় ফেরা হয়নি।’ বাংলাদেশ অভিজ্ঞ দলের মতোই ম্যাচটি বের করে নিয়েছে বলে তাঁর মত। জেমি খুশি ক্লিন শিট রেখে জয় বের করে নিয়ে আসতে পারায়। দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্স নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘টানা লিগ খেলে খেলোয়াড়রা এখানে এসেছে, ক্লান্তি একটা কারণ। নতুন যারা প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিল, তাদের জন্যও একটানা পারফরম করে যাওয়াটা সহজ ছিল না।’