মাসুদ রানা:

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগ গাইবান্ধা জেলা গোবিন্দগঞ্জ থানার কৃতি সন্তান সুমন কুমার মহন্ত ২০১১ ব্যাচ সার্জেন্ট পদে নিয়োগ পান তিনি । নিয়োগের পর থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দায়িত্ব পালন করেন রোদ-বৃষ্টি, ধুলো-বালি আর শব্দ দূষণ ট্রাফিক পুলিশের নিত্যসঙ্গী।

দিন-রাত রাস্তায় থাকার কারণে নানা রোগে ভুগছেন এরমধ্যে সাইনোসাইটিস, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা লেগে থাকে সারাবছরই। যানবাহনের তীব্র হর্নের কারণে শ্রবণ সমস্যায়ও ভোগেন অনেকে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও আছে নানা বিড়ম্বনা।গাড়িচালক ও পথচারীদের বেশিরভাগেরই রয়েছে আইন না মানার প্রবণতা। আইন মানাতে গেলেই নানা ধরনের হুমকি-ধমকির মুখোমুখি হতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।

তারপরও এসব সামাল দিয়েই দায়িত্ব পালন করেন তারা। রাজধানীর ধানমন্ডি জোনের দায়িত্ব পালনরত সার্জেন্ট সুমনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে উঠে আসে তাদের অনেক দুঃখ-কষ্টের নানা কথা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন সদস্য উচ্চকন্ঠ’কে জানান, কনস্টেবল ও সার্জেন্টরা দিনে আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করলেও ইন্সপেক্টর থেকে ওপরের কর্মকর্তারা ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। তারা আরও জানান, ট্রাফিক পুলিশের কোনও ছুটি নেই।

কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি নেই। শুধু কি তাই? দিন-রাত পরিশ্রমের পরও তাদের জন্য কোনও ধন্যবাদও নেই। দুর্ঘটনাসহ নানা ঝুঁকির মধ্যে ব্যস্ততম সড়কে কাজ করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এরপরও তাদেরকেই যানজটের জন্য নিত্য সাধারণ মানুষের গালমন্দ শুনতে হয়। সড়কে যানজট না থাকলে সেই কৃতিত্ব আর তাদের ভাগ্যে জোটে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা ঝুঁকি ভাতা পেলেও ট্রাফিক (নিরস্ত্র) বিভাগের কর্মকর্তারা তা পান না।

রাজধানীর ধানমন্ডি জোনের দায়িত্বরত সার্জেন্ট সুমন কুমার মহন্ত কে জানান, ২০১১সালের ব্যাচে সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দিয়ে এখনও তিনি সেই পদেই বহাল আছি পদন্নতির আশায় নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে মাহে রমজান মাসে ও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি ।কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি না পেলে দায়িত্ব পালনেও উৎসাহ কমে যায় নি পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। রাস্তায় দায়িত্ব পালনের সময় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সদা প্রস্তুত থাকেন সুমন কুমার মহন্ত নানা ধরনের হুমকি-ধমকির শিকার হলে ও কাজের কাজ সবার আগে।কাগজপত্রসহ নানা কারণে যানবাহন আটকালে শুরু হয়ে যায় তদবির। প্রভাবশালীরা আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন কমই। অনেকে আবার চাকরি খাওয়ারও হুমকি দেন। নানা ধরনের অপবাদও দেওয়া হয়। মামলা করলে বলা হয় ‘ঘুষ’ না দেওয়ায় মামলা দেওয়া হয়েছে।

আবার মামলা না করলে বলা হয় ‘ঘুষ’ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্র দেখাতেও অনীহা চালক ও মালিকদের। অকারণে ট্রাফিক পুলিশকে গালমন্দ করা নিত্যদিনের ব্যাপার— রাজধানীতে কর্মরত সার্জেন্ট সুমন কুমার উচ্চকন্ঠ’কে বলেছেন এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, ‘অবৈধ পার্কিংয়ে সরকারি, বেসরকারি সব গাড়িই রাখা হয় এটা আরেকটা বড় সমস্যা। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যায়। সার্জেন্ট সুমান কুমার মহন্ত বলেন‘টানা আট থেকে ১০ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে হয়। বসার সময়টুকুও পাই না। আজকাল কোমর ও মেরুদণ্ডে খুব ব্যথা হয়।

ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেছেন। কিন্তু চাকরি করলে কি আর বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে?’

তিনি বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টির দিনেও ডিউটি করতে হয়। রাস্তার ধুলো-বালিতে শুধু পোশাকই মলিন হয় না— রোদ, গরম, গাড়ির ধোঁয়া, গাড়ির হর্ন ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভোগেন ট্রাফিক পুলিশরা।’ সার্জেন্ট সুমন কুমার মহন্তের কাছে এসব কষ্টের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশে দায়িত্বে যখন ঢুকেছি, তখন তো এগুলো জেনেশুনেই ঢুকেছি। মানুষের জন্য কাজ করবো।

প্রয়োজনে সারাদিনই কাজ করবো। মূল সমস্যা হচ্ছে— রাস্তায় কেউই আইন মানতে চায় না। সবাই যদি আইন মেনে চলে, তাহলে রাস্তার পরিবেশ ভালো থাকবে। ট্রাফিক পুলিশের ভোগান্তিও কমে আসতো। সার্জেন্ট সুমন কুমার মহন্ত দায়িত্ব পালনে যেমন কঠোর’ আত্মমানবতার সেবায় তিনি এক মহামানব’ দিন শেষে ভুলে গেলে চলবে না আমরাও তো একজন মানুষ’আমাদের ও একটা মন আছে,জাতির এই ক্রান্তিকালে যখন অসহায় হয়ে পড়েছে এদেশের নিম্ম আয়ের অসংখ্য মানুষ তাদের জন্য নিজের সামথ্য অনুযায়ী কিছু করা তো সকলের দায়িত্ব। তাই আমি আমার সামথ্য অনুযায়ী চেষ্টা করি আমার এলাকার কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁডাতে, ইতি মধ্যে কয়েকজন কে আমি আমার সামাথ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছি ।

সার্জেন্ট সুমন কুমার মহন্তের এমন মহতি উদ্যোগ’কে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ও কর্তব্য পালন দেখে অন্যান্য সাধারণ মানুষজন প্রশংসশার জোয়ারে ভাসাচ্ছেন। পাশাপাশি সার্জেন্ট সুমন বলেন আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আমি আগামী দিনেও মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবো । স্যালুট জানাই সার্জেন্ট সুমন কুমার মহন্ত ‘কে আগামী দিনেও আপনি জাতির ক্রান্তিকালে এ রকম মানবিক ভূমিকায় নিয়েজিত হবেন সেই প্রত্যাশা থাকলো।