কিশোর গ্যাং প্রধান সাদ্দাম হোসেন ওরফে কানা সাদ্দাম এর রয়েছে ৩০ এর অধিক সদস্য বিশিষ্ট একটি কিশোর গ্যং, উক্ত কিশোর গ্যাং প্রধান সাদ্দামের রয়েছে ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী আরিফ ও কায়েস। সাদ্দাম, আরিফ ও কায়েস মিলে কনকর্ড লেকসিটি মার্কেটসহ লেকসিটি হাউজিং ও নামাপাড়া এলাকায় ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে গোটা খিলক্ষেত ও ভাটারা এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ইয়াবা ও নারীর রমরমা ব্যবসা করে আসছেন। এত বড় সিন্ডিকেট পরিচালনা করা সত্ত্বেও এলাকার কিছু বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় থাকায় বরাবরই অপরাধীরা রয়ে যায় প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাহিরে। চলতি বছরের মার্চ মাসে এক খুনের ঘটনায় খুনি হিসেবে খিলক্ষেত থানার মামলায় আরিফ এর নাম আসলেও সাদ্দাম কায়েস সহ অন্যান্য সহযোগীরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

উক্ত হত্যা মামলায় আরিফ এর নাম আসলে সাদ্দাম ও আরিফ কিছুদিনের জন্য রাজধানীর বাহিরে আত্মগোপন করে থাকে এবং পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে পুনরায় খিলক্ষেত এলাকায় ফিরে আসে। এই কিশোর গ্যং এর সদস্যরা দিনমজুর কাঠমিস্ত্রি ইলেকট্রিশিয়ান সহ বিভিন্ন ধরনের কাজকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করলেও সন্ধ্যার পর জমে ওঠে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা, এই গ্যং এর সদস্যরা সাদ্দামের নির্দেশে আরিফ ও কায়েস এর দিকনির্দেশনায় খিলক্ষেতের বিভিন্ন এলাকায় কাস্টমারের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেন। সাদ্দাম ও আরিফ এর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়, খিলখেত নামাপাড়া বোড ঘাট এলাকায় সাদ্দাম এর মামা দের রয়েছে মান্নান হার্ডওয়ার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাদ্দামের বিষয়ে সাদ্দামের মামা মান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এই ভাইগনার কার্যকলাপ খারাপ হওয়ায় আমরা তাকে পরিচয় দেই না। এলাকায় মামাদের পরিচয় দিয়ে মানুষকে ভয় ভীতি দেখিয়ে থাকেন সাদ্দাম, আর এতে যদি কেউ ভয় না পায় তাহলে কিশোর গ্যং এর সদস্যদের নিয়ে উক্ত ব্যক্তির উপর হামলা চালিয়ে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইয়াবা দিয়ে ভুক্তভোগীদের র্যাব ও ডিবি পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর ভয় দেখায়,সাদ্দাম এলাকায় আরও বলে বেড়ায় র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়নে অফিসার পদে আমার এক মামা রয়েছে, ইয়াবা ব্যবসায় কেউ বাধা দিলেই তাকে গ্রেপ্তার করানোর ভয় দেখায়।

কায়েস এর গ্রামের বাড়ি সন্দীপ, কায়েস এর বাবা খিলখেত নামাপাড়া বোর্ড ঘাট এলাকায় করোনা নামে একটি গার্মেন্টসে দারোয়ানের চাকরি করে, কায়েস এর ছোট ভাই মোহাম্মদিয়া হাউজিং এর সমিতি বিল্ডিংয়ে ইলেকট্রিশিয়ান এর কাজ করে। বছর খানেক আগে সাদ্দাম হোসেন (কানা সাদ্দাম) নোয়াখালীর নিজ এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিদেশ ফেরত আপন ভগ্নিপতিকে কিডন্যাপ করে, অবশেষে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভগ্নিপতিকে মুক্তি দেন সাদ্দাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদ্দামের গ্রামের বাড়ির এক ব্যক্তি বলেন মুক্তিপণ পাওয়ার কিছুদিন পর সাদ্দাম আবারো ভগ্নিপতিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটরবাইক কেনার জন্য ২ লক্ষ টাকা দাবি করে পুনরায় কিডন্যাপ করার ভয় দেখায়, এতে ভয় পেয়ে সাদ্দামের ভগ্নিপতি সাদ্দামকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং ভগ্নিপতির কাছ থেকে নেয়া উক্ত ২ লক্ষ টাকা দিয়ে সাদ্দাম টিভিএস কোম্পানির একটি এপাচি মোটরবাইক ক্রয় করে।

প্রায় আট বছর আগে সাদ্দাম চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে ঢাকায় পালিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে ঢাকায় টিকতে না পেরে নাটোরে পালিয়ে যায়, নাটোরে গিয়ে এক সরল সোজা মেয়েকে পটিয়ে বিবাহ করে, অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীকে মারধর করার অভিযোগে সাদ্দামের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয় উক্ত মামলায় সাদ্দাম ছয় থেকে সাত বছর যাবত ফেরারি আসামি হিসেবে পালিয়ে থেকে ঢাকায় ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। সাদ্দাম ময়মনসিংহের একটি সহজ সরল রিমি নামের মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিয়ে করে এবং সেই ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন উক্ত পুত্র সন্তান সহ স্ত্রীকে নোয়াখালীর নিজ বাড়িতে মায়ের কাছে রেখে ঢাকায় এসে এক টিকটক মডেলের সাথে সাদ্দাম প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। উক্ত টিকটক মডেলের সাথে ঘোরাফেরায় প্রচুর টাকা খরচ হয়, যা যোগান দিতে সাদ্দাম কে দিনরাত ইয়াবা ব্যবসা সহ বিভিন্ন রকম অপকর্ম করে টাকা উপার্জন করতে হয়। সাম্প্রতিককালে উক্ত মডেলকে বিয়ে করেন বলে এলাকায় প্রচারণা চালায় সাদ্দাম। প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকতে সাদ্দামের রয়েছে একাধিক বাসা, প্রথম স্ত্রীকে বর্তমানে শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহে রাখলেও খিলক্ষেত নামাপাড়া বোড ঘাট এলাকায় দারোগার বাড়িতে সাদ্দাম এর রয়েছে একটি ভাড়া বাসা সেখানে কায়েস সাদ্দাম ও আরিফ এবং কায়েসের বাবা-মা থাকেন।

এই বাসা থেকেই সাদ্দাম খিলক্ষেত এলাকার ইয়াবা ব্যবসা ও কিশোর গ্যং নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। উক্ত দারোগার বাড়িতে দুই মাসের ভাড়াপাওনা আছে বলে বাড়িওয়ালা অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সাদ্দাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী উর্মিকে নিয়ে ভাটারা থানা এলাকার ১৪৯/৩০ মাতবর বাড়ি সোলমাইদে আর একটি বাসা ভাড়া করে আত্মগোপনে বসবাস করে বলে একটি গোপন সূত্র থেকে জানা যায়। মাতবর বাড়ির উক্ত বাড়িওয়ালার কাছে জানতে চাইলে তিনি তিন মাসের ভাড়া পাওনা বলে জানায়। উক্ত বাসা থেকেই সাদ্দাম ভাটারা থানা এলাকায় ইয়াবা ও নারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।