করোনা অতিমারির কারণে অনেকটা উভয়সংকটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভোট নেওয়া হলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে চারটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন করাও জরুরি। অন্যদিকে দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদসহ (ইউপি) অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনও ঝুলে আছে।

kalerkantho

এ অবস্থায় সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট আইন খতিয়ে দেখে কবে কোন নির্বাচন করা যেতে পারে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বুধবার সভায় বসছে কমিশন। যদিও কমিশনের সদস্যরা বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগ্রহী নন।

সংসদের শূন্য আসনগুলোর উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এড়ানোর উপায় নেই। ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে দৈবদুর্বিপাকের জন্য মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন না করা গেলে বড়জোর ৯০ দিন অতিরিক্ত যে সময় পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তা-ও শেষ হওয়ার পথে।

যে চারটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন করতে হবে, সেগুলো হলো লক্ষ্মীপুর-২, সিলেট-৩, ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫।

এদিকে নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপের একক প্রার্থীরা বিনা ভোটে জয়ী হয়েও নির্বাচনের সরকারি ফল পাচ্ছেন না।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি দ্বিতীয় দফায় উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছানোয় সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। এতে নির্বাচন কমিশন গত ১১ এপ্রিলের সব নির্বাচন স্থগিত করে। এর মধ্যে ছিল প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউপি নির্বাচনসহ লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন, ১১টি পৌরসভা এবং কয়েকটি উপজেলার উপনির্বাচন। গত ১ এপ্রিল এসব নির্বাচন স্থগিত করার সময় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ না হওয়া পর্যন্ত এসব নির্বাচন হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্বাচন যে অবস্থায় বন্ধ হয়েছিল, সেখান থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মৃত্যুতে সিলেট-৩ আসনটি গত ১১ মার্চ শূন্য হয়। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা-৪ অনুসারে, আগামী ৮ জুনের মধ্যে এই আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় মর্মে সিদ্ধান্ত নেন এবং সংবিধান প্রদত্ত নিজ ক্ষমতাবলে ৮ জুনের পরের ৯০ দিনের মধ্যে এ নির্বাচন হবে বলে জানান। অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর আর দেরি করার সুযোগ নেই।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচনও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গত ২৭ এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল। এ ক্ষেত্রেও পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়ে  গত ৪ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন। এ ছাড়া গত ৪ এপ্রিল সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা-১৪ আসন এবং গত ১৪ এপ্রিল সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে কুমিল্লা-৫ আসনটি শূন্য হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুসারে এই পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর এবং মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ মার্চ থেকে জুনের মধ্যে ছয় ধাপে এই নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এসব ইউপির বেশির ভাগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ জেলা প্রশাসকদের জানিয়ে দিয়েছে, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বা অনধিক পরবর্তী ৯০ দিন পরিষদের আগের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাই দায়িত্ব পালন করবেন। সংশ্লিষ্ট আইনের ২৯(৫) ধারা অনুসারে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে আইনের ২৯(৫) ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। অতিরিক্ত ৯০ দিনের মধ্যেও নির্বাচন না হলে আমরা এই আইনের ১০১ ধারা অনুসারে প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারব।’

তবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়ার কারণে ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ করা যাবে না। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ আছে। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এই করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পক্ষে নই। কারণ এতে করোনাভাইরাস আরো ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। বিধি-নিষেধের মধ্যে কিভাবে নির্বাচন করা যাবে সেটাও চিন্তার বিষয়। সে ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ থাকলে যতটা সম্ভব নির্বাচন পেছানের পক্ষে অবস্থান নেব। আবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও উপেক্ষা করা যাবে না।’

ভারতের উদাহরণ টেনে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, করোনার মধ্যেই সেখানে বিধানসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনের সময় লকডাউন ছিল না। কিন্তু এখন লকডাউনের কারণে পশ্চিমবঙ্গের দুটি আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হচ্ছে না। সার্বিক এই পরিস্থিতি সম্পর্কে কমিশনের সভায় আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত হবে।