মোঃ আব্দুল হান্নান, ক্রাইম রিপোর্টার, সিলেট।
চুনারুঘাট উপজেলার আলীনগর বিট এলাকার একটি বাড়িতে মাজেদা আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
২৭ মে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মাজেদার স্বামীর বাড়ির বসত ঘরের ভীমের সাথে গলায় উড়না পেঁচিয়ে ঝুলে থাকা অবস্থায় তার অচেতন দেহ নামিয়ে আনেন মোজাম্মেল ও আহাদ নামের ২ প্রতিবেশী । এরপর টিউবওয়েলে নিয়ে গিয়ে মাথায় পানি ঢালার সময় বুঝতে পারেন তার মৃত্যু হয়েছে ।
সংবাদ পেয়ে চুনারুঘাট থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্ব একদল পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌঁছান।
পুলিশের প্রাথমিক কাজ ও সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠান।
তখন মাজেদার স্বামী সাইফুল ইসলাম পলাতক ছিলেন।
মোজাম্মেল জানান, ওই বাড়ির টিউবওয়েল থেকে পানি নিতে আসা সুফিয়া ও তাসলিমা নামের দুই মহিলা মাজেদা তার ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস লাগিয়েছেন বলে খবর দিলে তিনি দৌড়ে এসে ঘরের দরজা ভেঙে গলায় উড়না পেঁচিয়ে ভীমের সাথে ঝুলে থাকা অবস্থায় মাজেদাকে দেখতে পান।
তখন মাজেদার হাতের আঙ্গুলের নড়াচড়া দেখে দ্রুত তার গলার উড়নার গিট খুলে বাহিরে বের করে টিউবওয়েলে নিয়ে মাথায় পানি ঢালা অবস্থায় বুঝতে পারেন তার মৃত্যু হয়েছে।
তখন তাকে সহযোগিতা করেছেন পাশের বাড়ির মৃত তাহির মিয়ার পুত্র আহাদ আলী (৪৫)।
মোজাম্মেলকে সংবাদদাতা সুফিয়া খাতুন (২৫) শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার বিরামচর গ্রামের আঃ মোতালেবের কন্যা ও তাসলিমা আক্তার (২০) একই এলাকার ফারুক মিয়ার কন্যা।
সুফিয়া ও তাসলিমা ননদ ভাবী। আলীনগরে তারা তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
তাসলিমা ও সুফিয়া জানান, পানি নিয়ে যাওয়ার সময় দরজা আটকানো
ঘরের ভিতর বাচ্চার কান্না শুনতে পান। পাশের বাড়ির বৃদ্ধা সফিনা খাতুন (৭৫) মাজেদা গলায় ফাঁস লাগিয়েছে বললে তারা মোজাম্মেলকে এ সংবাদ দেন।
সফিনা বলেন, সুফিয়া ও তাসলিমার অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরেও মাজেদা দরজা না খোলায় এমনিতেই তিনি এ কথা বলেছেন।
সাইফুলের বড় ভাই তাজুল ইসলাম (২৮) বলেন, মাজেদার মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি সকালে মাজেদার রান্না করা পায়েস খেয়ে ধান ভাঙ্গার কাজে চলে যান। বিকালে মাজেদার বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাবার কথা ছিল।
মাজেদার মৃত্যুর খবর শুনে তিনি দ্রুত বাড়িতে এসেছেন। এসে মাজেদার স্বামী সাইফুলকে বাড়িতেই পেয়েছেন।
মাজেদার মা আছিয়া খাতুন জানান, বিয়ের পর থেকেই মাজেদার শান্তি ছিল না। প্রায়ই তার স্বামী সাইফুল তাকে মারধর করতো। গত ঈদুল ফিতরে তাকে বাবার বাড়িতে নাইওর যেতে দেয় নি। সরেজমিন পরিদর্শনে মাজেদার বসত গৃহের ভীমে বাধা একটি ঝুলন্ত উড়না, পাক ঘরের উনুনে রান্নারত অবস্থায় একটি ভাতের পাতিল ও পিছনের জানালা খোলা ছিল।
মাজেদার ৯ মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
মাজেদা উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের আঃ আলীর কন্যা ও আলীনগর গ্রামের আঃ রহমানের পুত্র বধূ।
ঘটনাস্থলে স্থানীয় মুরুব্বীয়ান, গ্রাম পুলিশ ও রাণীগাও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সফিক মিয়া উপস্থিত থাকলেও ১ নং গাজীপুর ইউপির কোনো জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ওসি (তদন্ত) চম্পক দাম বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।