করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে মুক্ত হতে অন্য সব কিছুর সঙ্গে মাস্ক পরতে হবে। যত বেশি মাস্ক পরা হবে তত দ্রুতই এই দুর্যোগ থেকে মুক্ত হবে দেশের মানুষ। মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাস্ক পরার ওপর এমন গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুরো ক্যাবিনেট দেশবাসীর কাছে এই অনুরোধ জানিয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে করা ব্রিফিংয়ে খন্দকার আনোয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং পুরো ক্যাবিনেট এটা বারবার রিকোয়েস্ট করেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘সাংবাদিকরাও আপনাদের জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে মাস্ক পরার বিষয়ে বলছেন; কিন্তু তার পরও দেখা যায় অনেক লোক মাস্ক পরে না। এই বিষয়ে আমাদের সবার সহযোগিতা দরকার। এটা আমাদের জাতীয় দুর্যোগ, এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে আমাদের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। আমরা বারবার বলছি, এটা কমিউনিটি ডিজিজ। আমাদের সবাইকে যার যার জায়গা থেকে আরো সতর্ক হওয়ার সুযোগ আছে। আমরা যদি সবাই মাস্ক ব্যবহার করি, অবশ্যই এটা কমে যাবে। গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ, আপনারা সবাইকে আরো বেশি করে বলুন। যে যেখানে আছেন মাস্কটা যেন ব্যবহার করেন, স্যানিটাইজার যেন ব্যবহার করেন।
প্রসঙ্গ লকডাউন : জেলা বা কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউন কার্যকরের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে বলা আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে লকডাউনসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব। তিনি বলেন, লকডাউনের বিষয়ে মেয়র ও স্থানীয় এমপি সাহেবরা, জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন যাঁরা আছেন তাঁরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
নন-ব্যাংকিংয়ে সীমাহীন সুদ নয় : ব্যাংকিং কার্যক্রম করে না (নন-ব্যাংকিং) এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া ঘোষণা করতে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। এতে যে বিপুল সময়ক্ষেপণ হয়, সেটা কমাতে চাইছে সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ফাইন্যান্স কম্পানি আইন, ২০২১’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে এই বিষয়ে আদালতের বাইরে দেউলিয়া ঘোষণার পথ খুঁজতে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সীমাহীন সুদ দেওয়ার অফার না করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও এই আইনে রাখতে বলেছে মন্ত্রিসভা—যেমনটা রয়েছে তফসিলি ব্যাংকের ক্ষেত্রে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৩ সালের ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশনস অ্যাক্ট ছিল। সেটাকে সংশোধন করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নন-ব্যাংকিং ফিন্যানশিয়াল’ প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে আকর্ষণ করতে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ সুদ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। যুবকের কথা নিশ্চয় মনে আছে। সেখানে অনেকে সর্বস্ব হারায়। ক্যাপ করে দেওয়া যায় কি না যে সর্বোচ্চ এত টাকা জমা রাখতে পারবে, সুদের হারও নির্ধারণ করে দেওয়া যায় কি না দেখা হচ্ছে। খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, নন-ব্যাংকিং ফিন্যান্স কম্পানিগুলোর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। পাশাপাশি ফৌজদারি আইনেও বিচার চলবে। সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত জেল হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব।
এনআইডি নিয়ে : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম বিষয়ে সিইসির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘এটি আগের বিষয়। এ বিষয়ে এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত এসেছে। তার পরও যদি কোনো বিষয়ে আলোচনার দরকার হয় আমরা করব।’
গতকালের মন্ত্রিসভায় ‘বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সা শিক্ষা আইন, ২০২১’ এর খসড়া অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশের কূটনীতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীরা যাতে বতসোয়ানার ভিসা ছাড়া যেতে পারে, বতসোয়ানার সঙ্গে সেই চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশলের বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণের খসড়া অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে ‘বিরোধীদলীয় নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সামরিক শাসনের আমলে এই আইন হওয়ায় নতুন করে সেটাকে বদলে নতুন আইন করা হচ্ছে।