স্টাফ রিপোর্টারঃ

অস্ট্রেলিয়ান রিলেটিভ স্পনসর মাইগ্রেশন (৮৫৫) পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট জাল ভিসা প্রস্তুত করে বাংলাদেশি নিরীহ মানুষকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজী। তিনি মাঝে মধ্যে দেশে এসে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। দেশে এসে উচ্চবিত্তদের টার্গেট করে আত্মীয়ের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবে বলে প্রলোভন দেখান। সপরিবারে গেলে (স্বামী-স্ত্রী) ২৩ লাখ আর একা গেলে ১৮ লাখ। এভাবে ভুয়া ভিসা ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন রোজী। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসে সবকিছুর কলকাঠি নাড়লেও দেশে তার একটি প্রতারক চক্র রয়েছে।

যারা টাকা-পয়সাসহ রোজীর কথামতো যাবতীয় কর্মকাণ্ড করেন। প্রতারক এই চক্রের হাতে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম (৪৭) ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন। নিজের সর্বস্ব হারিয়ে উম্মে ফাতেমা রোজির বিরুদ্ধে মামলা করেন এই ভুক্তভোগী। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে রোজীর সহযোগী চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. সাইমুন ইসলাম (২৬) ও আশফাকুজ্জামান খন্দকার (২৬)। তবে চক্রের মূলহোতা অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে রোজীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সিআইডি।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিডিয়া আজাদ রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঢাকা মেট্রো (পশ্চিম) ইকবাল হোসেন, বিশেষ পুলিশ সুপার ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) কানিজ ফাতেমা।

সিআইডি জানায়, রোজী অস্ট্রেলিয়া ইমিগ্রেশন কনস্যুলার জেনারেল হিসেবে ভুয়া পরিচয় দেন। এছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের কাছ থেকে পুরস্কৃত ও পুরস্কারের ছবি ভুক্তভোগীদের দেখান। এতে করে ভুক্তভোগীরা তাকে বিশ্বাস করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশনমন্ত্রী এলেক্স হাউকির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও জানান। এভাবে ধাপে ধাপে কাগজপত্র ও ভিসার কথা বলে টাকা নিতেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে একাধিক বাংলাদেশি তার কাছে প্রতারিত হয়েছেন।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, এমন ফাঁদে পড়ে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের আট সদস্যসহ অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম। এরপর তিনি দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা রোজীর অ্যাকাউন্টে দেন। এরপর কাগজপত্র ও ভিসা হাতে পেয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখতে পান সবগুলোই ভুয়া ও জাল। এভাবে প্রতারণা করে রোজী প্রায় একাধিক মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে জাল ভিসা প্রস্তুত কাজে ব্যবহৃত একটি কম্পিউটার, সাতটি অস্ট্রেলিয়ার জাল ভিসা গ্রান্ট নোটিশ, ফ্রি চিকিৎসার জন্য পাঁচটি হেলথ মেডিকেয়ার কার্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার বিমানের ছয়টি টিকিট জব্দ করা হয়। রোজীকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান তিনি।