২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর কফস হারবারে মেয়েদের ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষবার হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর থেকে দলটি শুধু হারতেই ভোলেনি, ওয়ানডেতে টানা জয়ের রেকর্ড নতুন করে লিখেছে তারা। মেয়েদের গণ্ডি পেরিয়ে ছেলেদের ক্রিকেটে রিকি পন্টিংয়ের দলের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে মেগ ল্যানিংয়ের দল। সে রেকর্ডটা আজ ২৫-এ আটকে যাওয়ার দশা হয়েছিল।
২৫ ম্যাচ জয়, প্রায় ৩ বছর ধরে না হারার রেকর্ডটা আজ থেমে যেতে বসেছিল একটি বলে। ঝুলন গোস্বামীর করা ৫০তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। এরপর যা হলো, সেটাকে নাটক বললেও কম বলা হয়। তবে সে নাটক পেরিয়ে শেষ বলে গিয়ে টানা জয়ের রেকর্ডটা আরেকটু লম্বা করে নিল অস্ট্রেলিয়া। বেথ মুনির দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাকে রে মিচেল ওভালে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫ উইকেটের মহানাটকীয় জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই জিতে নিয়েছে ওয়ানডে সিরিজ।
রেকর্ড ধরে রাখতে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ২৭৫ রান। তবে শুরুতে ঝুলন ও মেঘনা সিংয়ের সুইংয়ের তোপে পড়েছিল স্বাগতিকেরা। ইনিংসের তৃতীয় বলেই ঝুলনের বলে বোল্ড হয়েছেন অ্যালিসা হিলি। ষষ্ঠ ওভারে মেঘনাকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন অধিনায়ক মেগ ল্যানিং। মাঝে এলিস পেরির রান-আউটের পর পূজা ভাস্ত্রকারের বলে অ্যাশলি গার্ডনার আউট হলে অস্ট্রেলিয়া ৫২ রানে হারায় চতুর্থ উইকেট।
এ ম্যাচের আগে যে টানা ২৫ ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, সে ম্যাচগুলোর কোনোটিতেই এত কম রানের ভেতর ৪ উইকেট হারায়নি তারা। তাই বড় এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল দলটির সামনে। তবে প্রতিরোধ গড়লেন মুনি, সঙ্গে পেলেন টালিয়া ম্যাকগ্রাকে। পঞ্চম উইকেটে দুজন মিলে যোগ করলেন ১২৬ রান। ৭৭ বলে ৯ চারে ৭৪ রানের ইনিংসের পর ম্যাকগ্রা ফিরেছেন দীপ্তি শর্মাকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে। জয় থেকে তখনো ৯৭ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া।
দমেননি মুনি। এবার সঙ্গী হিসেবে পেলেন নিকোলা ক্যারিকে। শেষ ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ৮৭ রান। ৪২তম ওভারে ভাস্ত্রাকারকে তিন চার মেরে ব্যবধান একটু কমিয়ে নিয়েছেন মুনি। ৪৬তম ওভারে ১১৭তম বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন মুনি। তবে কাজ তখনো বাকি। শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ৩৩ রানে, পুনম যাদব ও রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় মিলে পরের ২ ওভারে দিলেন ২০ রান। এরপরই এলেন ঝুলন।
প্রথম ২ বলে ভারতের পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের সুবিধা নিয়ে মুনি আর ক্যারি তুললেন ৫ রান। তৃতীয় বলে ঝুলন করলেন ফুলটস, নো-বল হলেও রান নিতে পারলেন না ক্যারি। পরের ৩ বলে দুই লেগবাই আর একটা ডাবলসে এল ৪ রান। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান।
ঝুলনের বলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে শুধু ক্যাচটাই দিতে পারলেন ক্যারি।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হারতে ভুলে যাওয়া এক দলের বিপক্ষে জয়! আনন্দে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গিয়েছিল ভারতের। এমন অবস্থায় হঠাৎ নতুন উত্তেজনা। হতাশ হয়ে উইকেটের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা দুই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার ছুটলেন যাঁর যাঁর প্রান্তে।
শেষ বলটি ঝুলন ফুলটস করেছিলেন। বেশ কয়েকবার রিপ্লে দেখার পর টিভি আম্পায়ার সে ফুলটসকে নো বলে দিলেন। এরপর শুরু হলো অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের প্রান্ত বদলের ফলে রান হয়েছে কি না, সে তর্ক।
শেষ পর্যন্ত রান দেওয়া হয়নি, শেষ বলে তাই অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ২ রান। ঝুলনের ফুল লেংথের বলটা মিড উইকেটে খেলে ২ রান নিলেন ক্যারি, অস্ট্রেলিয়া জিতল টানা ২৬তম ম্যাচ!
এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে ২৭৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মূল কৃতিত্ব ছিল স্মৃতি মান্ধানার। তাঁর ৯৪ বলে ৮৬ রানের দারুণ ইনিংসের সঙ্গে নিচের দিকের ব্যাটাররাও ভূমিকা রেখেছেন। শেফালি ভার্মার সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ৭৪ রান যোগ করেছিলেন মান্ধানা, সেটা মাত্র ১১.১ ওভারেই। মিডল অর্ডারে অধিনায়ক মিতালি রাজ (৮) ও জস্তিকা ভাটিয়া (৩) ব্যর্থ হলেও রিচা ঘোষ (৪৪), দীপ্তির (২৩) পর ভাস্ত্রকার (২৯) ও ঝুলন (২৮*) ৭ উইকেটে ২৭৪ রান এনে দেন ভারতকে।