মুহাম্মদ রকিবুল হাসান রনি

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, বরিশাল সহ ঢাকার পাশর্বর্তী জেলাগুলোতে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা সংঘঠিত হয়ে আসছে। গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২১ তারিখে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নয়ারহাট বাজারস্থ ১৯টি স্বর্ণের দোকান থেকে অজ্ঞাতনামা ২০/২২ জন সশস্ত্র ডাকাত স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং নগদ টাকাসহ সর্বমোট ১,০২,৩২,০০০/= ডাকাতি করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় আশুলিয়া থানার মামলা করে ভুক্তভোগী দোকানদার ।উক্ত দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘঠনের ঘটনাটি সমগ্র দেশ জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশ গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে মামলাটি সিআইডি অধিগ্রহন করে। সিআইডির একাধিক চৌকস টিম উক্ত ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত ডাকাতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত ডাকাতিতে ব্যবহৃত স্পিডবোটের চালক ডাকাত মোঃ শাহিন’কে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয় এবং তার দেখানো মতে ডাকাতিতে ব্যবহৃত স্পিডবোটটি মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া বাজার ঘাট হতে জব্দ করা হয় ।তার প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২৫ সেপ্টেম্বর ২১ ইং মোঃ দানেশ ফকির’কে মাওয়া ঘাট এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী লুন্ঠিত স্বর্ণ ও রুপা ক্রয়ের সাথে জড়িত থাকায় মোঃ সুমন মিয়া’কে রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সিআইডির হেফাজতে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।
পরবর্তীতে আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী সোহরাব হাওলাদার’কে ২৯ সেপ্টেম্বর২১ ইং তারিখ রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
ইতোপূর্বে অত্র মামলা সংক্রান্তে গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে আসামী,শাহানা,আনোয়ার, দেলোয়ার,সবুজ রায়,আঃ রহিম,আল মিরাজ মিন্টু,কামাল,শাহিন শেখ,মোঃ দানেশ ফকির, মোঃ সুমন মিয়াদের বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করলে তারা আশুলিয়ার ডাকাতির সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে জানান তারা।
স্বীকারোক্তিমূলক স্বেচ্ছা প্রদত্ত জবানবন্দী বিজ্ঞ আদালতে তারা প্রদান করে।
ইতোপূর্বে ঢাকার নয়াবাজার এলাকার আসামী আঃ রহিমের ভাড়া করা বাসা হতে আশুলিয়ার ডাকাতির ঘটনায় লুন্ঠিত ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয় যার আনুমানিক মূল্য ১৪,০০,০০০/= (চৌদ্দ লক্ষ) টাকা এবং শাহানা আক্তারের(২৪) নিকট হতে একই ঘটনায় লুন্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির নগদ ২,৪৪,৮৪০/= টাকা উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন নয়ারহাট বাজারে দুর্ধর্ষ ডাকাতি মামলার তদন্তের সূত্র ধরে চাঞ্চল্যকর রাপা প্লাজার স্বর্ণের দোকানে চুরির মামলার রহস্যের জট খোলা সম্ভব হয়। সিআইডি কর্তৃক গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আসামী-সবুজ রায়,আঃ রহিম,রাপা প্লাজা স্বর্ণের দোকানে চুরিতে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং সোহরাব ও দেলোয়ারসহ আরো ৩/৪ জনের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। আসামী সবুজ এবং রহিম এর স্বীকারোক্তি মোতাবেক ডিএমপি’র কোতয়ালী থানাধীন ইসলামপুর এলাকায় আসামী সবুজের ভাড়া বাসা হতে সবুজের দেখানো ও বের করে দেয়া মতে, রাপা প্লাজার চোরাই যাওয়া স্বর্ণ হতে আনুমানিক ১২ ভরি স্বর্ণ (গলানো অবস্থায় স্বর্ণের পাত হিসেবে) উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয় যার মূল্য আনুমানিক ৮,৪০,০০০/= (আট লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকা।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২১ ইং তারিখ গভীর রাতে ঢাকা মহানগরীরর ধানমন্ডি মডেল থানাধীন ২৭ নং রোডের রাপা প্লাজা মার্কেটের ২য় তলায়, রাজলক্ষী জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়।এই সময় দুস্কৃতিকারীগণ দোকানের শাটার ভেঙ্গে আনুমানিক ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনাটি সকল মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
দ্রুততম সময়ে নয়ারহাট বাজারে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতিতে জড়িত ডাকাত সর্দার সোহরাব হাওলাদার ও আন্তঃজেলা ডাকাত দলের অন্যান্য সক্রিয় সদস্য এবং অভ্যাসগতভাবে লুন্ঠিত স্বর্ণ ক্রয়ের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার, লুন্ঠিত স্বর্ণ উদ্ধার, ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত স্পিডবোট আটক করে সিআইডি ।
যাহা বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডির একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।