২০০১ সালে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে রিকশা চালিয়ে জীবিকা চালাতো কামরুল ইসলাম। ২০১৬ সালে তৈরি করে ড্যান্স ক্লাব। নাচ শেখানোর আড়ালে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক নারীকে এনে পাচার করেছেন ভারতে।
তাদের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, দেশের ৮টি সীমান্ত দিয়ে নারী পাচার হচ্ছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রীক নারী পাচারের আরেকটি চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। দেশের নানা এলাকা থেকে নারী সংগ্রহ করে ঢাকার বিভিন্ন সেইফ হাউসে রাখতো চক্রটি। ডিজের আড়ালে শতাধিক নারীকে ভারতে পাচার করেছে একটি চক্র।
রাজধানীর মিরপুরে র্যাব–৪–এর কার্যালয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার রাতের ওই সব অভিযানে ২৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশে চাকরিসহ নানা প্রলোভনে তাদের পাচার করা হচ্ছিল। তাদের মধ্যে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা ২২ নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে ও চুয়াডাঙ্গা থেকে উদ্ধার করা এক নারীকে ভারতে পাচার করা হচ্ছিল।
র্যাবের তথ্য মতে, তেজগাঁও ও উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মধ্যপ্রাচ্যে মানব পাচার চক্রের অন্যতম হোতা নুর-নবী ভূঁইয়াসহ (৪৪) সাতজনকে। অন্যরা হলেন আবুল বাশার (৫২), আল ইমরান (৪১), মনিরুজ্জামান (৩৫), শহিদ সিকদার (৫৪), প্রমোদ চন্দ্র দাস (৬২) ও টোকন (৪৫)।
এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ভারতে পাচারকারী চক্রের চার সদস্যকে। তাঁরা হলেন চক্রটির প্রধান কামরুল ইসলাম ওরফে ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুল (৩৭), তাঁর সহযোগী রিপন মোল্লা (২২), আসাদুজ্জামান সেলিম (৪০) ও নাইমুর রহমান (২৫)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক নারীরা জানান, “নাচ শিখানোর নামে প্রথমে ঢাকায় এনে বেপোয়ারা জীবন যাপনে অভ্যস্ত করা হতো তদের। পরে ভারতে সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ লোভনীয় চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হতো”।
দেশের অন্তত ৮টি সীমান্ত দিয়ে নারীদের ভারতে পাচার করা হতো। এই চক্রের সাথে ভারতের কয়েকটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশ। তারাই ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করতো।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক আরেকটি চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। চক্রটি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নারী সংগ্রহ করে ঢাকার কয়েকটি সেইফ হাউসে রাখতো। ৩টি সেইফ হাউস থেকে ১৪ জনকে উদ্ধার করা হলেও ঢাকায় এমন আরও অন্তত ৬টি সেইফ হাউস রয়েছে বলেও জানায় র্যাব।
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে গৃহকর্মী, নার্স, রেস্তোরাঁকর্মীসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োগ দেওয়ার নাম করে নারীদের পাচার করে আসছে চক্রটি। তারা মূলত ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাচারের পর বিক্রি করে দিত। চক্রটি ৩০–৩৫ জন নারীকে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে।
এই চক্রটি অবৈধভাবে অন্তত ৩৫ জনকে বিদেশে বিক্রি করেছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অন্তত দুই শতাধিক মানুষকে জর্ডান, কুয়েত, কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে।