দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় প্রতারক চক্রের ০১ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন যাবত ডিজিটাল প্লাটফর্মে চাকুরী দেয়ার নামে ভ‚য়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে যেমন- Ex-army arms body guard, House Manager/Caretaker, Security Supervisors, Security guard| এই ধরনের আকর্ষনীয় অনলাইন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি চক্র প্রতারনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়। তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের এমএলএম কোম্পানীর বিভিন্ন প্রজেক্টে সাধারন মানুষকে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। 

    এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখ দিবাগত রাতে র‌্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএমপি ঢাকার খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-০২, রোড নং-১৩, বাসা নং-১২ এর ৫ম তলায় অবস্থিত ‘NH Security Service Ltd’ এর অফিসে অভিযান পরিচালনা করে এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য মোসাঃ সালমা আক্তার মুন্নি (২১), জেলা-মাদারীপুর’কে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত অভিযুক্তর নিকট হতে ০১ টি সিপিইউ, ০২ টি মোবাইল ফোন, ভ‚য়া নিয়োগপত্র, ২০ টি ভিজিটিং কার্ড এবং ০৮ পাতা চাকুরী বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট উদ্ধার করা হয়। 

    ধৃত অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। প্রতারক চক্রটি ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। ”Bd jobs Bd’” হলো তাদের Facebook page এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত দেশের সাধারণ মানুষের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে তাদেরকে চাকুরী দেওয়ার নামে ভ‚য়া নিয়োগপত্র প্রদান করে প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছে মর্মে জানা যায়। 

    ধৃত অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, উক্ত এমএলএম কোম্পানীটির নাম ‘NH Security Service Ltd’ এবং রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় তাদের অফিস। তাদের অফিস হতে চাকুরী প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বলা হয়। পরবর্তীতে চাকুরী প্রার্থীরা ইন্টারভিউ এর জন্য অফিসে আসার পর তাদের নিকট হতে ফরম বাবদ ৫০০/- টাকা নেওয়া হয়। তারপর চাকুরী প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে তাদের চাকুরী নিশ্চিত হয়েছে মর্মে জানিয়ে দেওয়া হয়। চাকুরী প্রার্থীদের চাকুরীতে যোগদানের পূর্বে পদ অনুসারে ৫/৬ হাজার টাকা জামানত বাবদ আদায় করা হতো এবং তাদের জানানো হতো পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০/১৫ হাজার টাকা বেতন প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে উক্ত সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে অন্তত ১০ জন নতুন চাকুরী প্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকুরী প্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে তাদের বেতন প্রদান করা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করা হতো। পরবর্তীতে ভিকটিমরা উক্ত কোম্পানীটির প্রতারণার বিষয়ে বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানো হতো। এছাড়াও ধৃত অভিযুক্ত বিগত ০৬ মাসে প্রায় ১২৩৯ জন চাকুরী প্রার্থীকে তাদের কোম্পানীর নিয়োগ ফরম পূরণ করতঃ তাদের নিকট হতে ১১,২৬,২০০/- টাকা হাতিয়ে নেয় মর্মে জানা যায়। সিকিউরিটির গার্ড নিয়োগের নামে কোম্পানী চলছিলো কিন্তু গত ০৬ (ছয়) মাসে তারা কোন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিয়েছে মর্মে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি ।

   উল্লেখ থাকে যে, অভিযুক্ত মোসাঃ সালমা আক্তার মুন্নির পৈত্রিক নিবাস মাদারীপুর। সে অতি সাধারণ ঘরের একজন স্বল্প আয়ের কর্মজীবির মেয়ে হওয়া স্বত্তে¡ও সে চরম উচ্চাভিলাসী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন সঠিক প্রমাণাদি না পাওয়া গেলেও তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে মর্মে জানা যায় যার সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান এর সাথে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ২০২০ সালের শুরু থেকে ‘NH Security Service Ltd’ নামক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন এবং চাকুরী প্রত্যাশী দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রী/জনগণকে টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছেন। আরও উল্লেখ্য যে অভিযুক্ত মুন্নির কোম্পানী আইন সম্পর্কে কোন রকম ধারনা নেই এবং এ ব্যাপারে তিনি একেবারেই অবগত নন।

  ধৃত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।