সোমবার রাত পর্যন্ত চলবে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র
দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আগামীকাল সোমবার। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রাথমিকভাবে গতকাল (৩ জুন) থেকে এটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জনিয়েছিলেন।
কিন্তু এক ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা আছে তা দিয়ে আগামীকাল ৫ জুন রাত পর্যন্ত কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট চালু রাখা যাবে। এরপর তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে এবং জুন মাসজুড়েই এটি বন্ধ থাকবে।
এদিকে ভয়াবহ তাপদাহে গত মে মাসজুড়েই ছিলো দেশব্যাপী তীব্র লোডশেডিং। ফলে জনদুর্ভোগ ছিলো চরমে। এই অবস্থায় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হলে দেশের চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও সংকটের দিকে চলে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
তাদের মতে, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কোনো সুখবর নেই।
পায়রা থেকে গড়ে দৈনিক ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যা সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। এতে মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পেতো। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হলে এর প্রভাব সারা দেশে পড়বে।
উল্লেখ্য, এই কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কেন্দ্রটির ও বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, আমরা এরই মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধের অর্থ পেয়েছি এবং কয়লা আনার ব্যবস্থা করেছি। এলসি খোলার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কয়লা আনার জন্য জাহাজ ও কয়লা প্রস্তুত থাকতে হবে। এরপর এলসি খুলতে হবে।
তিনি জানান, আমরা মে মাসে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলসি খুলতে রাজি হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা ৬০ মিলিয়ন ডলার অর্থ পরিশোধ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার এই অর্থ পরিশোধের জোর চেষ্টা করছে। আমরা চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা করছি। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়াসহ কয়লা এনে তা আনলোড করতে কমপক্ষে ২৫ দিন সময় লেগে যাবে। এর ফলে কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটই জুন মাসজুড়ে বন্ধ থাকবে।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হাতে বিদ্যুৎ আছে। আশা করছি পিডিবি বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারবে।
এর আগে কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটটিও এবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, পিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পাওনা ছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। পিডিবি কিছু টাকা পরিশোধ করেছে। তবে বৈশ্বিক সংকটের কারণে ডলার সংকট থাকায় টাকা ডলারে রূপান্তরিত করতে না পারায় এলসি করা যাচ্ছে না। এ কারণে কয়লা আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।