চট্টগ্রামে ভোটার তালিকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত ‘হারিয়ে যাওয়া’ ল্যাপটপ দিয়েই রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছে বলে সন্দেহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, ‘‘চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের ভোটার তালিকার কাজে ব্যবহৃত ‘বেশ কয়েকটি’ ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। ২০১৫ সালের পর থেকে এই ল্যাপটপগুলোর কোনও হদিস নেই। আমরা ধারণা করছি, ল্যাপটপগুলো ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা এনআইডি সংগ্রহ করেছে।’’
রতন কুমার দাশ আরও বলেন, ‘খোঁজ না পাওয়া ল্যাপটপগুলো উদ্ধারের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও জিডিও করা হয়নি। হারিয়ে যাওয়ার পরপরই ল্যাপটপগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা উচিত ছিল। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কোনও কাগজপত্রও তারা প্রদর্শন করতে পারেনি।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি অনেক আগের ঘটনা। ঠিক কয়টা ল্যাপটপ হারানো গেছে, এটি আমরা নিশ্চিত নই। তিন থেকে চারটা হবে।’
এগুলো হারিয়ে যাওয়ার পর জিডি করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিডি করা হয়েছে, তবে অনেক আগের বিষয় হওয়ায় এখন জিডির কাগজও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ল্যাপটপ হারানোর বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
রতন কুমার দাশ আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জাতীয় পারিচয়পত্র পাচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা এমন তথ্য পেয়েছি। কারণ এনআইডির তথ্যগুলো লাইসেন্স করা কম্পিউটার ছাড়া আপলোড করা সম্ভব নয়। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য আমরা মহাপরিচালকের কাছে অনুমতি চাইবো।’ আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।
রতন কুমার দাশ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা (দুদক) রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, এই পর্যন্ত ৪৬টি এনআইডি শনাক্ত করেছেন। যেগুলো রোহিঙ্গারা জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকতে পারেন। কিন্তু, তারা একটি এনআইডিরও কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারেননি। নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে ৪৬ জনের কথা বললেও আমরা ধারণা করছি, ১০০ জনের মতো রোহিঙ্গা এনআইডি সংগ্রহ করে থাকতে পারে।’
রতন কুমার দাশ বলেন, ‘মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস গিয়ে আমরা কথা বলেছি, ওই অফিস থেকে আমাদেরকে ৫৪ রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারা কীভাবে এনআইডিসহ কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করেছে, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’
রবিবার দুপুরে দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপপরিচালক শরিফ উদ্দিনের নেতৃত্বে দুদকের একটি টিম নির্বাচন কমিশন আঞ্চলিক কার্যালয়ে যায়। সেখানে তারা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই টিমে রতন কুমার দাশও ছিলেন।