বিগত ১০ বছরে বিরোধী দলের প্রায় ২৬ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখের বেশি মামলা দেয়া হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার বাংলাদেশে ‘নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছে।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে, তারা এসবকে ধ্বংস করে ফেলেছে স্বৈরতান্ত্রিক বা অটোক্রেটিক প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখানে দুইটি বিষয় আছে- একটা হচ্ছে পোশাক, পোশাক পরে ভাব দেখানো হয়-এটাই গণতন্ত্র, ভেতরে ভেতরে গণতন্ত্রের উল্টো।
গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করে দলের মহাসচিব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের দলের কমিটমেন্ট শতকরা ১০০ ভাগ। আমাদের দলই সেই দল, যে দল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে নিয়ে এসেছিলেন এবং বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন এবং বদ্ধ অর্থনীতি মুক্ত করে দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন।’
সারাদেশে বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিগত ১০ বছরে চরম রাজনৈতিক নৈরাজ্য চলছে। বিরোধী দলের ওপর চলছে নিষ্পেষণ, অত্যাচার, গুম, খুন, হামলা। যে ব্যক্তি এই সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে তার বিরুদ্ধে নেমে এসেছে প্রশাসনের খড়গ। বিগত ১০ বছরে বিরোধী দলের প্রায় ২৬ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখের বেশি মামলা দেয়া হয়েছে।’
‘সারাদেশে গত ১০ বছরে গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যা, মিথ্যা মামলা, কাস্টডিওতে হত্যা- এসব একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে’মন্তব করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘ আজ বাংলাদেশ সরকারকে প্রশ্ন করতে পারে, এই দেশ তাদের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের স্বাক্ষরকারী হয়েও কীভাবে এবং কী ধরনের একটি সরকার চালু রেখেছে, যেখানে সে সনদের কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। তাহলে কি এটা বলা অযৌক্তিক হবে যে তারা এটা মানছে না।’
‘আজ থেকে মাত্র সপ্তাহখানেক আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বিশ্বের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময়ে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং একই সঙ্গে স্পষ্ট করেছে-গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বর্তমান সরকারের কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। সম্প্রতি কানাডা সরকারও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ্কই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে’, বলেন ফখরুল।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যচিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সব প্রতিবেদন বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়গুলো স্পষ্টভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। গণতন্ত্রের মূল বাহন যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি ৩০-এর আগের রাতে কী ছিল তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই, তা বিশ্বের সকল নামিদামি পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়া বিশ্ববাসীর সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিয়ে আমি আপনাদের বোঝাতে চাই, নিউজ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট যে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল তার শিরোনাম ছিল-‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যুর ওপর একটি শোকবার্তা।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে আইনবর্হিভুত খেয়াল-খুশি মতো হত্যাকান্ড ঘটানো, বিচারবর্হিভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম, বেআইনিভাবে আটক, জেলখানায় জীবনের প্রতি হুমকির পরিবেশ, বন্দিদের রুমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিধি-নিষেধ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, সাইভার সিকিউরিটি আইন যা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার বড় রকমের আইন, খালেদা জিয়ার আটক করে রাখার বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশে কোনো বিরোধী দল নেই, তাদের সকল কার্য্ক্রম স্তব্ধ করে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মাধ্যমে। সরকারের সর্বশেষ কার্যক্রম ছাত্রদলের কাউন্সিল ও নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।