তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন প্রথম অবস্থায় কন্ট্রোল ডিমোলেশিং (নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ) পদ্ধতিতে ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে সেখান থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। সর্বশেষ সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যানুয়ালি বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে ভাঙা হবে বিজিএমইএ ভবন। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানও চিহ্নিত করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

বিজিএমইএ ভবন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রথমদিকে কন্ট্রোল ডিমোলেশিং পদ্ধতিতে ভাঙার ঘোষণা দেয়ার পর চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাও বলেছিল রাজউক। কিন্তু পরে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তির পর পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ, সামিয়া এন্টারপ্রাইজ, সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স ও পিঅ্যান্ডএস এন্টারপ্রাইজ। তবে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি নিজ খরচে ভবন ভেঙে নেয়ার পাশাপাশি রাজউককে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেবে। চলতি মাসেই বা যেকোনোদিন এ প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়ে ভবন ভাঙার কাজ শুরু হতে পারে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে ভবন ভেঙে অপসারণ করবে প্রতিষ্ঠানটি।

সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিলের মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছিলেন আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সময় পার হওয়ার পর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ১৬ এপ্রিল মাঠে নামে রাজউক।

বিজিএমইএ ভবনে অভিযানে আসে রাজউক। প্রথম দিন ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সুযোগ দেয়া হলেও পরবর্তিতে ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়। তবে মালামাল সরানোর জন্য পরে আরও কয়েক দফা সুযোগ দেয়া হয়।

প্রথম দিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেছিলেন, কন্ট্রোল ডিমোলেশিং (নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবনটি অপসারণ করব। আমরা ইতোপূর্বে এ বিষয়ে চাইনিজ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা চাই ভবনটি সঠিকভাবে অপসারণ হোক।

তবে পরবর্তিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় তিনি বলেন, প্রথমে কন্ট্রোল ডিমোলেশিং পদ্ধতিতে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার চিন্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু পরে সার্বিক দিক বিবেচনা করে ম্যানুয়াল বা সনাতন পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙার পক্ষেই রাজউক। কারণ, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙার সক্ষমতা রাজউকের নেই। এটি করতে হলে বিদেশি সাহায্যের দরকার হবে। এতে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে চলে যাবে। আর সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙলে রাজউকের আয় হবে। পাশাপাশি যারা ভবনটি ভাঙার কাজ পাবেন তারাও লাভবান হবেন।

২০০৬ সালের দিকে হাতিরঝিলে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিজিএমইএ ভবন অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয় গত ১২ এপ্রিল। গত বছরের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএকে ১ বছর ১০ দিন সময় দেন।

২০১১ সালে ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়।

রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। আর এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো।

রায়ের পর ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।