পুরুষও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন, এমন ভাবনা যে কোনো পুরুষেরই কল্পনার অতীত। আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হলো, শুধু নারীরাই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ কারণে কোনো পুরুষ বিষয়টা তেমন গুরুত্ব দেন না। নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করেন না। এ মনোভাব ডেকে আনে মৃত্যু। অনেকে ভাবেন, বংশের কারো ক্যানসার থাকলে তবেই পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বিশ্ব ক্যানসার রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে যে হারে ক্যানসারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৫ বছর বয়সের আগেই প্রতি পাঁচজন পুরুষের মধ্যে একজনের এ ধরনের ক্যানসারের প্রবণতা দেখা যাবে। আর প্রতি আটজনের মধ্যে একজন এ রোগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পুরুষের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি। তরুণরাও এ ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়।
তবে কী কারণে পুরুষরা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, এর সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। বংশে কোনো নারী আত্মীয়ের স্তন ক্যানসার থাকলে অনেক সময় পুরুষের ক্যানসার হতে পারে। এমনকি জিনগত রোগ ‘ক্লাইনেফেল্টার’-এর কারণেও অনেকের স্তন ক্যানসার হয়। পুরুষের শরীরে একটি অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোমের কারণে এ রোগটি হয়ে থাকে। এ কারণে পুরুষের স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়।
লক্ষণ : স্তন ক্যানসার হলে যে চামড়া স্তন ঢেকে রাখে, তার পরিবর্তন দেখা যায়। চামড়া লাল হয়, কুঁচকে যায়, ভাঁজ বা খাঁজ তৈরি হয়, স্তনবৃন্তের রঙের পরিবর্তন হয়, লালচে হয়ে যায় বা ভেতরের দিকে ঢুকে যায় এবং স্তনবৃন্ত থেকে রস বের হয়।
নিজেই পরীক্ষা করুন : যদি স্তনে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে বা শক্ত হয়ে যাচ্ছে অথবা নিপল থেকে কোনো ধরনের রস বের হচ্ছে দেখা যায়, তা হলে দেরি না করে সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। অবশ্য এসব লক্ষণ দেখা দিলেই যে তা ক্যানসারই হবে, এমন ভাবা মোটেও উচিত নয়। কিন্তু এড়িয়ে যাওয়াও ঠিক নয়। এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে নারীদের যেমন, পুরুষেরও তেমনই।
লেখক : টিউমার ও ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
শের-ই-বাংলানগর, ঢাকা