পেঁয়াজের দামে লাগাম টানতে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান চালানো হয়েছে আরো কয়েকটি জেলায়। এ ছাড়া সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে গভীর রাতে পেঁয়াজের বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালিয়েছে র্যাব পুলিশ বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে গঠিত টাক্সফোর্স।
খাতুনগঞ্জে অভিযান চালানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে কেনা পেঁয়াজ অস্বাভাবিক দরে বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি আমরা। খাতুনগঞ্জের সব আড়তেই একই অবস্থা। প্রথম দিনে আমরা আড়তদারদের সতর্ক করে দিয়েছি। পরে অঙ্গীকার নিয়েছি যাতে তারা অতিরিক্ত মুনাফায় পেঁয়াজ বিক্রি না করে। এরপর অভিযানে প্রমাণ পেলে জরিমানা করা হবে।’
গতকালের অভিযানে মেসার্স আবদুল আউয়ালের বেচাকেনার নথি যাচাই করে দেখা গেছে, ১১ সেপ্টেম্বর ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি ৪২ টাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর ৫৬ টাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ৬০ টাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর ৫২ টাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ৯০ টাকায় বিক্রি করেছে। ৪২ টাকা দরে কেনা পেঁয়াজ ৯০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। শাহজালাল ট্রেডার্সে নথিতে ২৮ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ বিক্রি করেছে ৬০ টাকায়। কিন্তু তারা কত টাকা দরে কিনেছে এর কোনো হিসাব নেই। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকপক্ষের কেউ ছিলেন না। তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রাখে।
আদালত খাতুনগঞ্জের বেশির ভাগ আড়তেই মূল্যতালিকা ঝুলানো দেখতে পাননি। অভিযানের শেষ দিকে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করায় খাজা ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এদিকে, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে গভীর রাতে বিভিন্ন পেঁয়াজের গোডাউনে র্যাব পুলিশ বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে গঠিত টাক্সফোর্স অভিযান চালিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান আকরামুল হকের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, টাক্সফোর্সের দল প্রথমে কাস্টমসসংলগ্ন একটি পেঁয়াজের গোডাউনে অভিযান চালায়। ওই গোডাউনে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ দেখতে পায় টাক্সফোর্স দল। এরপর কর্তৃপক্ষকে ডেকে এনে বুধবার সকালে এসব পেঁয়াজ বাজারজাত করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আরো পাঁচ-ছয়টি পেঁয়াজের গুদামে পৌঁছায় দলটি। সকালের মধ্যে এসব পেঁয়াজ বাজারজাত করা না হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জানায় দলটি।
অভিযানের বিষয়ে টাক্সফোর্সের নেতৃত্বাধীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান আকরামুল হক বলেন, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার আগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে পেঁয়াজ গুদামে মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি গুদামে প্রশাসনের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আজ সকালেই বাজারজাত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে পেঁয়াজ বাজারজাত করা না হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান টাস্কফোর্সের ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার চান্দিনাসহ অনেক জায়গায় পেঁয়াজের গুদামে অভিযান চালায় গোডাউনে র্যাব পুলিশ বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে গঠিত টাক্সফোর্স। অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়।