ক্যাসিনো কেলেঙ্কারীতে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, সেলিম প্রধান ও গণপূর্তের ঠিকাদার জি কে শামীমকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে খালেদ ও শামীম র্যাবের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব। এর আগে তাঁদের দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাঁদের দুজনের রিমান্ড শেষ হলে মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাইবে সিআইডি।
জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা এরই মধ্যে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ব্যবসায়ী, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ তাঁদের দীর্ঘদিনের অপকর্মের সঙ্গী আরো অনেকের নাম বলেছেন। সেই সঙ্গে কোন ক্যাসিনো থেকে কত টাকা পেতেন তা জানিয়ে তাঁরা আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ র্যাবকে জানিয়েছেন, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানেরও ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে একসময় তাঁরা ক্যাসিনো কারবার করেছেন। ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করতেন তাঁরা। এসব অর্থ যুবলীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের অনেক সিনিয়র নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাগ দিয়ে তাঁরা অনেক সুবিধা পেতেন। সেই সময় থেকেই মতিঝিলের ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে তাঁর মাসিক আয় ছিল ৪০ লাখ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব থেকে মাসিক আয় ছিল তিন লাখ টাকা। শাহজাহানপুর রেলওয়ে গেট-সংলগ্ন মাছের বাজার থেকে মাসিক আয় ছিল ৬০ হাজার টাকা। শাহজাহানপুর এলাকার লেগুনা থেকে মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা। বিভিন্ন ফুটপাত থেকে মাসিক আয় ছিল ২০ হাজার টাকা। তবে এসব অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রেখেছেন তিনি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার আরএইবি ব্যাংকে ৬৮ লাখ টাকা, সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকে দেড় কোটি টাকা, থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংকে এক লাখ বাথ, বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ছয় কোটি থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংকে নিজের নামে ১৯ কোটি টাকার এফডিআর, ব্র্যাক ব্যাংকে স্ত্রী সুরাইয়া আক্তারের নামে ৫০ লাখ টাকা, এনসিসি ও ব্র্যাক ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা করে ৩০ লাখ টাকা গচ্ছিত রয়েছে।
এ ছাড়া জি কে শামীমও রিমান্ডে ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে সাবেক ও বর্তমান সরকারের নেতাদের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আরো কাকে কাকে টাকা দিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে তা স্বীকার করেছেন বলে র্যাব সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংকক যাওয়ার পথে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সেলিম প্রধানকেও গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সূত্র জানিয়েছে, তিনি অনলাইনে ক্যাসিনো কারবার করে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর গুলশানের অফিসের একটি গোপন কামরায় শতাধিক তরুণীর যাওয়া-আসার তথ্য দিয়েছেন। ওই অফিসে অনেক রাজনীতিক, গোয়েন্দা, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দেশের অনেক কোটিপতি ব্যবসায়ীদেরও যাতায়াত ছিল। সেলিম সেখানকার অনৈতিক কর্মকাণ্ড ভিডিও করে রেখে তাঁদের অনেককে জিম্মি করে নিজের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাতেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালিয়ে এই তিনজনসহ আরো অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক মামলা হলে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
খালেদের মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা র্যাব-৩ উপপরিচালক ফাইজুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডে নিয়ে খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর তথ্য যাচাই-বাছাই করে অন্যদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।