সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে ভারতীয় পক্ষ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নয়া দিল্লিতে শনিবার বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আট বছর আগে দুই দেশের সরকারের সম্মতি অনুযায়ী বাংলাদেশ এ চুক্তি আশু স্বাক্ষরের জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।’
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছেন যে তার সরকার ভারতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে চুক্তিটি সম্পাদনের জন্য কাজ করছে।’
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘২০১১ সালে দুই সরকারের সম্মতি অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে ফ্রেমওয়ার্ক অব ইন্টেরিম এগ্রিমেন্ট আশু স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন’-এর জন্য বাংলাদেশের জনগণ অপেক্ষায় রয়েছে একথা বলার পরিপ্রেক্ষিতে মোদি তার বক্তব্য দেন।
বিবৃতি অনুযায়ী দুই প্রধানমন্ত্রী যুগপৎভাবে অপর ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনেও দ্রুততার সাথে সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিনিময় এবং ফ্রেমওয়ার্ক অব ইন্টেরিম এগ্রিমেন্টের খসড়া প্রস্তুত করার জন্য যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি পর্যায়ের কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অপর নদীগুলো মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার উল্লেখ করে এতে বলা হয়, দুই নেতা ফেনী নদীর পানি বণ্টনে খসড়া ফ্রেমওয়ার্ক অব ইন্টেরিম এগ্রিমেন্ট সুনির্দিষ্ট করারও নির্দেশ দেন।
মোদির সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতকারে রোহিঙ্গা সমস্যাও উল্লেখ করা হয়।
মোদি এসব বাস্তুচ্যুত লোকদের নিরাপদ, দ্রুত ও স্থায়ীভাবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ বাড়ি-ঘরে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হন।
৫৩-দফা বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিসহ রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া সুগম করতে আরো বৃহত্তর প্রয়াস গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও দুইনেতা একমত পোষণ করেন।
এতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের’ আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে বাংলাদেশ সরকারের মানবিক প্রয়াসে সহায়তা করতে পঞ্চম কিস্তি মানবিক সহায়তা সরবরাহ করবে।
তিনি বলেন, সহায়তার এ কিস্তিতে থাকবে তাবু, ত্রাণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম এবং মিয়ানমার থেকে আসা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে এক হাজারটি সেলাই মেশিন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে ভারত রাখাইন রাজ্যে এ পর্যন্ত ২৫০টি বাড়ি তৈরির প্রথম প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং দেশটি এখন ওই এলাকায় অপর একগুচ্ছ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত লোকদের প্রয়োজন মোতাবেক সহায়তায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের মানবিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শান্ত, স্থিতিশীলতা এবং অপরাধ মুক্ত সীমান্ত’ নিশ্চিত করতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যকর এবং যত শিগগির সম্ভব দুইদেশের সকল বাকি স্থানে সীমান্ত বেড়া নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে তাদের নিজ নিজ সীমান্ত বাহিনীকে নির্দেশ প্রদানের ওপর দুই প্রধানমন্ত্রীই গুরুত্বারোপ করেছেন।
দুই নেতাই সীমান্তে বেসামরিক লোকের হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ এবং এ ধরনের সীমান্ত হত্যাকান্ডের ঘটনা জিরোতে নামিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত বাহিনীকে নির্দেশ প্রদানে সম্মত হন।
বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতি এবং অঞ্চলে শান্তি নিরাপত্তা এবং স্থিতিশিলতা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রশংসা করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশ এবং অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হুমকিগুলোর মধ্যে সন্ত্রাস একটি।
বিবৃতিতে দুই নেতাই যে কোন ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সর্মথন করার কোন যুক্তি হতে পারে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা এবং মোদি সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে জঙ্গিবাদ, চরমপন্থী, সন্ত্রাস, চোরাচালানি, জাল মুদ্রা পাচার এবং সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে ঘনিষ্ট সহযোগিতা প্রদানে সম্মতির বিষয়টি পুন:রুল্লেখ করেন।
বিবৃতিতে বালাদেশের পক্ষ থেকে পাট পণ্যসহ ভারতে রপ্তানিকৃত বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাসের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ভারত কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। নেতৃদ্বয় ১২টি সীমান্ত হাট প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করতে তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশে দেশটির আগ্রহের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ এর আগে ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পন্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশের অনুমতি প্রদানের অনুরোধ জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, অপরদিকে ভারতের পক্ষ থেকে আখাউড়া আগরতলা বন্দর দিয়ে পণ্য প্রবেশে বন্দর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, অদূর ভবিষ্যতে নিয়মিত বাণিজ্যের অধিকাংশ পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহর করা হবে।
বিবৃতিতে দুই নেতাই এ বছরে এই প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ভারতে রপ্তানি হওয়াকে স্বাগত জানান।
তথ্যসূত্র : বাসস