সংগঠনে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখতে ঘাটে ঘাটে টাকা বিলিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। এ টাকার ভাগ পেতেন সংগঠনের এক শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছেন সম্রাট।
অস্ত্র ও মাদকের দুই মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সম্রাটকে। বর্তমানে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব। এর আগে একদিন তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে একই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
র্যাব জানায়, স¤্রাট ও তার সহযোগী যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমানকে একই কক্ষে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। র্যাব ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে স¤্রাট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
দিচ্ছেন। এসব তথ্যের মধ্যে কতটুকু সত্যতা আছে, যাচাই না করে বলা যাবে না। তাদের (স¤্রাট ও আরমান) র্যাব কার্যালয়ে এক সঙ্গে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
স¤্রাট ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হন। এর পর থেকে ৭ বছর ধরে এ পদে রয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেছেন, এ পদে দায়িত্ব পাওয়া এবং এর পর থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক শীর্ষ নেতাকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের ‘নজরানা’ দিচ্ছেন তিনি। এর পাশাপাশি ক্যাসিনো থেকে যে টাকা আয় হতো তা থেকে একটি বড় অংশই ওই নেতাকে দিতে হতো।
সম্রাট আরও বলেছেন, শুধু যুবলীগের ওই শীর্ষ নেতাই নন, আরও নানা ঘাটে তাকে নিয়মিত টাকা দিতে হতো। কেন্দ্রীয় যুবলীগের নানা অনুষ্ঠানের খরচও তাকে বহন করতে হতো। ‘নজরানা’ না দিয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগে কোনো পদে যাওয়া কঠিন ছিল। মোটা অঙ্কের ‘নজরানা’ দিয়ে যারা যুবলীগের বিভিন্ন পদ পেয়েছেন তারাই পরে খরচ করা টাকা উঠাতে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেন। কে কে নজরানা দিয়ে যুবলীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নাম বলেছেন সম্রাট।
সম্রাটের দেওয়া জবানবন্দির সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অধিকতর তদন্তে মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে সম্রাটের দেওয়া তথ্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঠিকাদার জিকে শামীম তাদের জবানবন্দিতে যেসব ব্যক্তির নাম বলেছেন তাদের একটি তালিকা সরকারের উচ্চপর্যায়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সম্রাট ও খালেদের জবানবন্দিতে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে। সম্রাটের কাছ থেকে প্রতি মাসে কত টাকা করে তিনি নিতেন জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্যও জানা গেছে। শুধু ওমর ফারুকই নন, যুবলীগের সাবেক এক চেয়ারম্যানের নামও বলেছেন সম্রাট। ওই নেতাও সম্রাটের ক্যাসিনোবাণিজ্য থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন।
সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে আরও বলেছেন, জুয়া খেলা তার নেশা ছিল। এ নেশা থেকে এক সময় সরাসরি ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন। এ ব্যবসা থেকে প্রতিদিন যা আয় হতো তা থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে টাকার প্যাকেট চলে যেত বলে জানিয়েছেন সম্রাট। তিনি আরও বলেছেন, তিনি এক হাতে টাকা কামিয়েছেন আরেক হাতে খরচ করেছেন। খরচ করেছেন দলের জন্য। দলের নেতাকর্মীদের পেছনে। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন যুবলীগের অন্য নেতারা। তারা যা কামিয়েছেন তা নিজেদের কব্জাতেই রাখতেন। দলের জন্য খুব কম খরচ করতেন।