ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পর পর তিনটি বোর্ডসভায় অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়। অবশ্য তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো-জুয়া ও দখলবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। পর পর তিনটি বোর্ডসভায় অনুপস্থিতির এমন অভিযোগ রয়েছে ডিএসসিসির আরও অন্তত ১৬ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। যারা অনুমতি ছাড়া একনাগাড়ে তিনটি থেকে ৮টি বোর্ডসভায় উপস্থিত ছিলেন না, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নোটিশ বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, মেয়র অথবা কাউন্সিলর তার স্বীয় পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন, যদি তিনি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন।
করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, অন্তত ১৬ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের সভায় একনাগাড়ে তিনটি থেকে ৮টি বোর্ড সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এসব ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুমতি নেননি। তাদের মধ্যে ৯ জন ১০টির বেশি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। কয়েকজন ১৯টি সভার মধ্যে মাত্র ৪ থেকে ৬টি সভায় উপস্থিত ছিলেন। এসব কাউন্সিলরের অনেকের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো, মদ, জুয়া, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ করপোরেশনের দায়িত্ব পালনেও অনীহার অভিযোগ আছে। কেউ-কেউ সরকারের অনুমোদন না নিয়ে একাধিকবার বিদেশেও গেছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন থেকে মন্ত্রণালয়ে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ করপোরেশনে অনুষ্ঠিত ১৯টি সভার মধ্যে মাত্র ছয়টি বোর্ডসভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম থেকে দশম, ১২তম থেকে ১৭তম পর্যন্ত মোট ১৩টি সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া অনেকবার বিদেশ গেছেন। এসব অভিযোগেই সাঈদকে কাউন্সিলর পদ থেকে বহিষ্কার করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
২০১৫ সালের ২৮ মার্চ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের পর ডিএসসিসিতে মোট ১৯টি সভা হয়। এসব সভায় অন্তত ১৬ জন কাউন্সিলর একনাগাড়ে তিনটি সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন। কেউ-কেউ ১৪-১৫টি সভায় অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের কয়েক জন দু-একবার অনুমতি নিলেও বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন অনুমতিও ছাড়াই।
অনুপস্থিত থাকা কাউন্সিলরদের মধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেন মহসিন ৮ বার করপোরেশনের সভায় উপস্থিত হননি। এর মধ্যে ১৫তম সভা থেকে ১৭তম সভা পর্যন্ত টানা ৩টি সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আশ্রাফুজ্জামান ১০টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে অষ্টম থেকে দশম পর্যন্ত টানা ৩ সভা ও ১৪ থেকে ১৮তম পর্যন্ত টানা ৫টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার ১২টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১২তম থেকে ১৯তম টানা ৭টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তবা জামান পপি ১১টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২য় থেকে ৪র্থ টানা ৩টি, ১২ থেকে ১৬তম টানা ৫টি সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জসীম উদ্দিন আহমেদ ৮টি বোর্ড সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে ৮ম থেকে ১০ম, এবং ১৬ থেকে ১৮তম সভাগুলোয় টানা অনুপস্থিত ছিলেন।
২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম সজিব ১১টি বোর্ডসভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ৭ম থেকে ১৩তম টানা ৭টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার পারভেজ বাদল ৮টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১৫তম থেকে ১৯তম টানা ৫টি বোর্ডসভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হাসান ১৪টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ থেকে ১১তম পর্যন্ত টানা ৬টি ও ১৩তম থেকে ১৯তম পর্যন্ত টানা ৭টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল ৮টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১৩ থেকে ১৭তম পর্যন্ত টানা ৪টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. বিল্লাল শাহ ১১টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২য় থেকে ৫ম টানা ৪টি, ১১ থেকে ১৩তম টানা ৩টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন ৬টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৬তম পর্যন্ত টানা ৩টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু ১৫টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২য় থেকে ৬ষ্ঠ টানা ৫টি এবং ১০ম থেকে ১৭তম সভা পর্যন্ত টানা ৮টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম খান টিপু ৬টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১৩ থেকে ১৫তম পর্যন্ত টানা ৩টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছিম মিয়া ৫টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৭তম টানা ৩টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
এর বাইরে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একএম মমিনুল হক সাঈদ ১৩টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১ম থেকে ৩য় মোট ৩টি, ৭ম থেকে দশম মোট ৪ বার এবং ১২ থেকে ১৭তম পর্যন্ত ৬ বার করপোরেশনের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
সংরক্ষিত আসনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন মণি ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ টানা ৪টি ও ১২তম থেকে ১৪তম টানা ৩টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোসাম্মৎ শিউলী হোসেন ৫ম থেকে ৮ম টানা ৪টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম ৮টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি টানা তিনটি বোর্ডসভায় কখনো অনুপস্থিত ছিলেন না। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেনও ৮টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী দেলোয়ার হোসেন খান ৭টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনিও টানা তিনটি বোর্ডসভায় উপস্থিত ছিলেন না।
এ বিষয়ে জানতে ডিএসসিরি মেয়র সাঈদ খোকনকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি রিপ্লাই দেননি। ফোন ধরেননি ডিএসসিসির সিইও মোস্তাফিজুর রহমানও।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, কোনো কাউন্সিলর একাধারে করপোরেশনের তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে প্রথমে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। এর পর যথোপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেবে করপোরেশন। মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ কারণে তাদের অপসারণও করা যাবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের এমন অনুপস্থিতির ঘটনা থাকলে অবশ্যই তাদের নোটিশ দেওয়া উচিত।