আজ জান্নাতির এক মাস ১৩ দিন। তার মা আমান্তিকার মৃত্যুর ৪০ দিন পূর্ণ হলো। আমান্তিকা গত ৯ সেপ্টেম্বর ভুল চিকিৎসার কারনে তার ছোট্ট কন্যাশিশু জান্নাতিকে একা রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।
সে সময় প্রসূতি আমান্তিকা সিজারের পর একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। চিকিৎসক রোগীর পেটে গজ ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করে দেন। এরপর আবারো অপারেশন করে গজ ব্যান্ডেজ বের করতে গিয়ে জরায়ু কেটে ফেলেন। পরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ সেপ্টেম্বর সে মারা যান অমান্তিকা।
ভুল চিকিৎসায় আমান্তিকার মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারেনি। বিচারে দাবিতে বিক্ষুদ্ধ স্বজনরা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভাংচুর করে। অভিযুক্ত চিকিৎসক নুরজাহান ও তার সহযোগী শাহনাজের গ্রেফতার এবং শাস্তি দাবি করেন। ঘটনার পর ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ স্বজনদের বিচারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহতের স্বামী পিন্টু মিয়া বাদী হয়ে ডা. নুরজাহান (৫৫) ও তার সহযোগী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মী শাহনাজের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালের মালিক সৈয়দা মুনছুরা বেগমের পক্ষে তার ভাই সৈয়দ শরীফউদ্দিন কাদেরী বাদী হয়ে বড় সাদীপুর গ্রামের আজিম (২৮), জামাল (৩৫), রাসেল (২৮), সুমন মিয়া (৩২), হাসিব (২৫) সহ অজ্ঞাতনাম ১৫/২০ জনে হাসপাতাল ভাংচুরে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও এক লাখ ছয় হাজার টাকা চুরির মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টির সুরাহা করতে মামলা বাদ দিয়ে শালিস ডাকেন সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি জয় মিয়া ও নিহত রোগীর স্বজনদের নিয়ে ঘটনার ১৫ দিন পর একটি সালিশ করেন। তিনি সালিশে রায় দেন যেহেতু হাসপাতাল ভাংচুর করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে এ টাকা রোগীর স্বজনরা হাসপাতালকে পরিশোধ করবে। দরিদ্র পরিবারটি টাকা দিতে অপারগতা জানালে, উভয়ে নিজ নিজ খরচে মামলা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া শিশুটির ভরন-পোষণের জন্য মাসে মাসে যতটা পারে সাহায্য করার কথা বলা হয়।
এ ব্যাপারে পিন্টু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিচারের ব্যাপারে একটি কথা বলার ক্ষমতাও আমাদের নেই। চেয়ারম্যান যা করেছেন ন্যায্য বিচার করেছে। সবই তো আমাদের কপালের ফের, নইলে গরিব হলাম কেন? গরিবের আবার কিসের ন্যায় অন্যায়।
নিহত আমান্তিকার মা বিলাপ করে বলেন, আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দুইবার অপারেশনের পর আইসিইউতে রাখতে হয়েছে। এমন নির্দয় বিচার আমাদের কপালে কেন? আল্লাহ ভালো জানেন। এতিম জান্নাতির জন্য তো কিছু ক্ষতিপূরণ দিতে পারতো। মা হারা জান্নাতির ক্ষতিপূরণতো কোনদিন দিতে পারব না। তিনি আরো বলেন, লোকমুখে শুনেছি জয় মিয়া নুর জাহান ও শাহনাজের কাছ থেকে নয় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। সেখান থেকে আমার নাতনিকে একটা দুধের কৌটা তো কিনে দিতে পারতেন।
এ ব্যাপারে ডা. নুরজাহানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এ তো অনেক আগেই শেষ। নতুন করে কথা বলার কি আছে। বলেই তিনি মুঠো ফোনের সংযোগ বিছিন্ন করে দেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জয় মিয়া বলেন, রোগীর মৃত্যুতে আমার যে কত বড় ক্ষতি হলো তা দেখলেন না। হাসপাতাল ভাংচুরের পর এখন আমি কোন রোগীই পাই না। যারা হাসপাতাল ভাংচুর করেছে তারা গরিব বলে আমি ছেড়ে দিয়েছি। রোগী মরেছে ডাক্তারের ভুলে, তারা ডাক্তারকে না ধরে আমার হাসপাতাল ভাংচুর করল। এটা অমানবিক।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, বাদীপক্ষ আপোষ মীমাংসার কাগজ নিয়ে আমাদের কাছে মামলা প্রত্যাহারের লিখিত আবেদন করেছে। এত বড় অমানবিক ঘটনার বিচার যদি ভুক্তভোগী না চান সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।