ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দাম ওঠানামা করলেও এবার কোনো লাগাম নেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে। গত দুই সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় বেড়েই চলেছে দাম। গতকাল মঙ্গলবারও আরেক দফা দাম বেড়ে পেঁয়াজ এখন প্রতিকেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দামের এ পাগলা ঘোড়ায় লাগাম পরানোই যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ন্যাম সম্মেলন নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনেও উঠে আসে প্রসঙ্গটি। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী


বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে এত অস্থির হওয়ার কিছু নেই। পেঁয়াজ ছাড়াও কিন্তু রান্না করা যায়। বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, দামের সমস্যা থাকবে না। এটা সাময়িক।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের হাতে কিছু নেই। বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বেচতে হয়। অন্যদিকে পাইকার ও আমদানিকারকদের মতে, বাজারে প্রতিনিয়ত পেঁয়াজের সংকট তীব্র হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উভয় বাজারেই সমান তালে বেড়ে চলেছে পেঁয়াজের দাম। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মুখে সেই পুরনো বুলি- ‘বাজারে পেঁয়াজ নেই’। অথচ মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে পেঁয়াজের মজুদ স্বাভাবিক। পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকেও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে।


রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরবাজার ও এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২২ টাকা এবং মিসরের পেঁয়াজ ১০০ টাকায়। শ্যামলীর বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুজ্জামান মামুন বলেন, ‘রান্নায় পেঁয়াজ তো লাগবেই। দাম বেশি হলেও অল্প করে কিনতে হয়। তাই বলে এত দামে! আজ পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখি ১৪০ টাকা। গতকাল ছিল ১৩০ টাকা। কাল হয়তো দেখব ১৫০ টাকা। বাজার মনিটরিংয়ে কি কেউ নেই? এটা যেন মগের মুল্লুক!’
এ দিকে পাইকারি বাজারেও দেশি পেঁয়াজের দাম পাঁচ টাকা বেড়েছে। শ্যামবাজারের মা বাণিজ্যালয়ের পাইকার আবদুল আজিজ বলেন, মিসরের পেঁয়াজও এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ভারত পেঁয়াজ বন্ধের পর প্রথম পর্যায়ে মিসরের পেঁয়াজ দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি।
শ্যামবাজারের মনিহার বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী বিজয় সরকার বলেন, দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। মজুদে ভারতীয় পেঁয়াজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। দেশি পেঁয়াজও শেষ। পেঁয়াজের বড় আমদানি আসছে, তবে সময় লাগবে আরও। এ মুহূর্তে বাজারে রয়েছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ, যার বেশিরভাগই নষ্ট। তাই দামও হু-হু করে বাড়ছে।


ঢাকার পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান লাকসাম বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বাজারে সত্যিই পেঁয়াজ নেই। সরকার পেঁয়াজ আমদানির কথা বললেও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তার ওপর সিংহভাগ পেঁয়াজই পথে নষ্ট হচ্ছে। বড় চালান আসতেও সময় লাগবে। এ অবস্থায় দ্রুত পেঁয়াজের আমদানি বাড়ানো না গেলে বেসামাল হয়ে যাবে বাজার। দাম আরও বাড়বে।
এ দিকে মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, পেঁয়াজ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এই সমস্যা সাময়িক। আরও পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির তথ্য তুলে ধরে জানান, এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে ৫০ হাজার টনের বড় চালান আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। এই পেঁয়াজ শিগগির দেশে পৌঁছাবে।


অন্যদিকে এস আলম ও সিটি গ্রুপ ছাড়াও দেশের কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ আড়াই হাজার টন করে তুরস্ক ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। তবে তা পৌঁছাতে সময় লাগবে আরও। এর আগেই বাজার অস্থির হয়ে ওঠার আশঙ্কায় আতঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।


কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফয়েজ বলেন, বড় আমদানি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময় লেগে যাবে। ততদিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার সামাল দিতে দ্রুত আমদানি বাড়ানো না গেলে দাম দেড়শতকও ছাড়িয়ে যাবে। পাশাপাশি দুষ্টু ব্যবসায়ী ও অসাধু মজুদদারদের আটকানো না গেলে যত পেঁয়াজই আনা হোক না কেন, দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে না। কারণ আমদানিকারকরাই দাম নির্ধারণ করে দেন। তাদের নির্ধারিত দামের বাইরে পেঁয়াজ বিক্রি হয় না।