২০১৬ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে ভারতের বিদায়ের পর উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন মুশফিকুর রহীম। যে কারণে তারপর থেকে ভারতের বেশিরভাগ ক্রিকেটপ্রেমীই ঘৃণা করেন মুশফিককে। সুযোগ পেলেই কটাক্ষ করেন একই আসরে মুশফিকের ছোট্ট ভুলের কারণে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হারের কথা মনে করিয়ে।
তবে সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে বদলাতে শুরু করেছে পরিস্থিতি। কমতে শুরু করেছে কটাক্ষকারীদের রাগ। বিশেষ করে রোববার দিল্লিতে দায়িত্বশীল এক ইনিংসে বাংলাদেশকে জেতানোর পর অনেক ভারতীয়দের কাছ থেকেও শুভেচ্ছা পাচ্ছেন মুশফিক।
কিন্তু দিল্লি ছেড়ে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে রাজকোট পৌঁছে যে সারপ্রাইজটা পেয়েছেন মুশফিক, তা হয়তো দূর কল্পনাতেও আনেননি এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। আগামী বৃহস্পতিবার রাজকোটের সৌরাষ্ট্র স্টেডিয়ামে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। সে লক্ষ্যে সোমবার রাজকোটে পৌঁছলেও অনুশীলনে নামেনি বাংলাদেশ দল।
আজ (মঙ্গলবার) অনুশীলন করতে এসে দারুণ এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন মুশফিক, খোঁজ পেয়েছেন নিজের অন্যতম সেরা ভক্তের। অনুশীলনের ফাঁকে যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মুশফিক, তখন তার জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে সৌরাষ্ট্র নারী ক্রিকেট দলের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটার ঋদ্ধি রুপারেল। বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের শুরু থেকে ঋদ্ধিসহ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের আরও অনেকেই ছিলেন সেখানে।
তবে বাকি সবাই চলে গেলেও, ঋদ্ধি থেকে যান অনুশীলন শেষ হওয়ার জন্য। মুশফিক যখন বিশ্রামের বিরতি নিলেন, তখনই জানা গেলো ঋদ্ধির দাঁড়িয়ে থাকার কারণ। নিজে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হওয়ায় এবং উচ্চতাও কম হওয়ায়, ক্রিকেটার হিসেবে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমকে অনুসরণ করে থাকেন ঋদ্ধি। চেষ্টা করেন মুশফিকের মতোই খেলতে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের অভিজ্ঞ তারকার ব্যাপারে নিজের ভালো লাগা ও অনুসরণ করার কথা ঋদ্ধি শুনিয়েছেন টাইগারদের অনুশীলনের সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের। দিল্লিতে মুশফিকের ম্যাচ জেতানোর ইনিংসের ব্যাপারে ঋদ্ধি বলেন, ‘আমি তাকে আদর্শ মনে করি। কারণ আমিও উইকেটকিপার এবং টপ অর্ডার ব্যাটার। শুরুতে উনি কিছুটা সময় নেন, পরে হুট করে খেলাটা বদলে দেন। এই যেমন সেদিন ক্যাচ পড়ার (ক্রুনাল পান্ডিয়ার হাত থেকে) পরও তার অ্যাপ্রোচ ইতিবাচক ছিল।’
ঋদ্ধি বলতে থাকেন, ‘উনার উচ্চতা আমার মতো। আমি সব সময় আমার উচ্চতার উইকেটকিপারদের আদর্শ মানি। গত ম্যাচে উনি যেভাবে খেলেছেন, সেটা ছিল দারুণ। ক্যাচটা পড়ার পরে চারটা বাউন্ডারি মেরে উনি যেভাবে খেলা শেষ করেছেন, তা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের জন্য স্বপ্নের মতো।’
ভারতীয় ক্রিকেটার হলেও বাংলাদেশের মুশফিককে আইডল মানার পেছনে কারণটাও পরিষ্কার করেছেন ঋদ্ধি। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট দুনিয়াটা আসলে উন্মুক্ত। হ্যাঁ, ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও পছন্দ, যেমন (মহেন্দ্র সিং) ধোনি। কিন্তু তাদের খেলা অনেক আলাদা। মুশফিকের খেলার ধরন আমার মতো, এই কারণে আমি তার সঙ্গে বেশি একাত্মতা বোধ করি।’
এসময় তিনি জানান, গতবছর কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে নারী প্রিমিয়ার ক্রিকেটে খেলতে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু সময়-সুযোগ না মেলায় সেবার মুশফিক-সাকিবদের সঙ্গে দেখা করা হয়নি। সে কথা মনে করে ঋদ্ধি বলেন, ‘গত বছর আমি যখন কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে বাংলাদেশে খেলতে গেলাম, তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো এক টুর্নামেন্টে ব্যস্ত ছিলেন।’