দিল্লিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের পর বাংলাদেশি এক সাংবাদিক মুশফিকুর রহিমকে প্রশ্ন করেছিলেন, ক্রিকেটারদের আন্দোলনের পর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এমন পারফরম্যান্সের রহস্য কী? আন্দোলনের সঙ্গে সাফল্যের যোগসূত্র আছে কি না? হাসতে হাসতে মুশফিকুর রহিম উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তাহলে তো এরকম আন্দোলন রোজ করতে হবে! (সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাসির রোল পড়ে যায়)। পরবর্তীতে মুশফিক যোগ করেন, ‘এরকম পরিস্থিতি আসলে কেউ চায়না। ক্রিকেট হোক বা পরিবারে হোক। কোনো মহলেই এটা চাইবে না। এখান থেকে ফিরে আসার আমাদের একটাই রাস্তা ছিল; ভালো একটি জয়, ভালো একটি ম্যাচ। এটাই আমাদের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনতে পারে।  আমাদের দলকে এবং পুরো জাতিকে।’

মুশফিকুর রহিম এমন অনাকাঙ্খিত ও অস্থির পরিস্থিতি না চাইলেও বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট ধাক্কা খাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দুটি প্রমাণ তো একেবারে তরতাজা।  ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার চলে যায় ভারতে।  হাবিবুল বাশার, শাহরিয়ার নাফিস, আফতাব আহমেদ, নাজিমউদ্দিন, মোশাররফ হোসেন রুবেলরা চলে যাওয়া ক্রিকেটশূন্য হয়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায় দ্রুত। আন্তর্জাতিক ম্যাচে টাইগাররা হারায় ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডকে।  আবার ২০১৩ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলকে যখন ম্যাচ, স্পষ্ট ফিক্সিংয়ে আট বছর নিষিদ্ধ করা হয় তখনও মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট থেমে যাবে।  পিছিয়ে যাবে লম্বা সময়ের জন্য। কিন্তু সাকিব, তামিম, মাশরাফি, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহরা দলের হাল ধরেন ভালোভাবে। 

মুশফিকের নেতৃত্বে শুরুটা খারাপ হলেও মাশরাফির হাত ধরে পাল্টে যায় বাংলাদেশ।  ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলেছিল স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনাল। আবার বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে।  এবারও ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বড়সর ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।  আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ হার, ক্রিকেটারদের আন্দোলন ও সবশেষে যুক্ত হয় সাকিবের নিষেধাজ্ঞা। টালমাটাল এ সময়টায় বাংলাদেশ আবার পেয়েছে সাফল্য।  ভারতকে টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছে তাদেরই মাটিতে।

এ জয় বিশাল গুরুত্বের, অনেক ঐশ্বর্যপূর্ণ।  এবার সিরিজ জয়ের পালা।  দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন অস্থিরতা বিরাজ করা এ সময়টায় সিরিজ জিতলে অনেক বড় সাফল্য পাবে বাংলাদেশ,   ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে যা হলো গত কদিনে! সেদিক থেকে এমন একটা সিরিজ জেতা দারুণ প্রেরণাদায়ক হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ও বাংলাদেশ দলের জন্য।’