আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদ জানাতে দেশটিতে আকস্মিক এক সফরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রশাসন শান্তি চুক্তি নিয়ে তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
“তালেবানরা একটি চুক্তি করতে চাইছে,” বাগরাম বিমানঘাঁটিতে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে এই বিমান ঘাঁটিতে ট্রাম্প ও আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির বৈঠকও হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আফগানিস্তানে এটিই ট্রাম্পের প্রথম সফর।
তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু ও দু’পক্ষের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের দিনকয়েক পর ব্যাপক গোপনীয়তার মধ্যে থ্যাংকস গিভিং ডে-তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি সফর করলেন।
ট্রাম্পের ‘দীর্ঘ নীরবতা’ নিয়ে যেন কোনো ধরনের সন্দেহ না জাগে, সেজন্য আফগান সফরের সময়ও নিয়মিত বিরতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একের পর এক পোস্ট দেয়ার ব্যবস্থা করে পেন্টাগন।
রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে আফগানিস্তান নামেন; সৈন্যদের সঙ্গে থ্যাংকস গিভিং ডে-র ডিনারে অংশ নিয়ে মধ্যরাতের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
বেশ ক’জন উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে আফগানিস্তান নামা প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান মার্কিন জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান মার্ক মিলে।
সৈন্যদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ কমিয়ে আনা হবে বলেও ঘোষণা দেন।
২০০১ সালে তালেবান উৎখাতে অভিযান শুরুর ১৮ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে এখনও প্রায় ১৩ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে।
“চুক্তি কিংবা পূর্ণাঙ্গ বিজয় অর্জিত হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকছি। তারা খুব করে একটি চুক্তি করতে চাইছে,” বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আশরাফ ঘানি তার বক্তৃতায় আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন।
“আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এখন নেতৃত্ব নেবে,” বলেছেন তিনি।
তালেবানরা গত সপ্তাহে কাতারের দোহাতে মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফের শান্তি আলোচনা শুরুর কথা নিশ্চিত করেছিল।
আগের আলোচনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র শান্তি চুক্তির পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে আফগানিস্তানে যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিলেও তালেবানরা তাতে সাড়া দেয়নি।
বৃহস্পতিবার বাগরাম বিমানঘাঁটিতে দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্পও প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছেন।
“আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বলেছি, যুদ্ধবিরতি হোক। তারা সেসময় যুদ্ধবিরতি চায়নি, এখন চাইছে। আমার ধারণা, বিষয়টি এখন এভাবেই কার্যকর হবে,” বলেছেন তিনি।
শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই আফগান সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও, তালেবানরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দফারফার আগে কাবুল প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে নারাজ বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর টুইটারে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘানি বলেছেন, “দুই পক্ষই (যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকার) মনে করে, তালেবানরা যদি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে তাদের অবশ্যই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া উচিত।”
ট্রাম্পের আকস্মিক সফর কিংবা শান্তি আলোচনা ও চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান সরকারের অবস্থান বিষয়ে তালেবানদের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।