গত শনিবার ভোট হয়েছে। বুথফেরত সব সমীক্ষায় বলা হচ্ছিল আপের বড় ধরনের জোয়ার আসছে। রাত ৩টা পর্যন্ত আসন ধরে ধরে বৈঠক করেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা।
সেই বৈঠক ডেকেছিলেন অমিত শাহ। পর দিন সকালে ঘুম ঘুম চোখেই দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তিওয়ারি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে ছিলেন না।
শনিবার রাত থেকেই ‘উধাও’ অমিত শাহ। তাকে ‘দূরে রাখা’র কৌশলও রচনা হয় তখন থেকেই। এরপর সংসদেও যাননি। সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বের শেষ দিনেও তাকে দেখা যায়নি।
হুইপ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গিয়েও একবার ঢুঁ মারেন। কিন্তু অমিত শাহকে দেখা যায়নি। অথচ দিল্লির ভোটের দু’সপ্তাহ আগে তিনিই প্রচারের পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
ঘুরে ঘুরে বলেছিলেন, শাহিন বাগে ‘কারেন্ট’ লাগাতে। ছোট-বড় মিলিয়ে দিল্লিতে পাঁচ হাজার সভার আয়োজন করেছেন। সব রাজ্য থেকে সাংসদ, নেতাদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে মন্ত্র শিখিয়ে পাঠিয়ে দেন অলিতে-গলিতে। তাতেও দুই অঙ্কে পৌঁছাল না তার দলের বিধায়ক সংখ্যা।
অমিত শিবিরের অনেকের অবশ্য আপত্তি আছে ‘তার দল’ তকমায়। তাদের মতে, দিল্লি ভোটের আগেই বিজেপির সভাপতি পদে এসেছেন জগৎপ্রকাশ নড্ডা। কাল রাতেই বার্তা গেছে, ফল প্রতিকূলে গেলে নড্ডাকেই সামনে রাখবে দল। আজ সকাল থেকে হলো সেটাই।
ভোটের ফল স্পষ্ট হতেই খাঁ খাঁ করছে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির ঝাঁ চকচকে সদর দপ্তর। সেখানেই দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে উপস্থিত থাকলেন নড্ডা। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন তিনিই।
বেলা সাড়ে ৩টা নাগাদ হারও স্বীকার করলেন। কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানানোর টুইট করতে সন্ধ্যা গড়াল মোদির। অমিতের তখনো কোনো উচ্চবাচ্য নেই।
প্রধান সেনাপতি নেই। কিন্তু বিজেপির সৈনিকেরা সংসদ চত্বরেই আলোচনা শুরু করেছেন, মেরুকরণের ধার কি তবে কমছে? আলোচনায় উপস্থিত বিজেপির অধিকাংশ সাংসদই মনে করেন, অমিতের কৌশলে ভুল ছিল না। শাহিন বাগের মতো একটি এলাকায় মুসলিমরা আবদ্ধ। দিল্লির জনতা তাই এখনো ‘বিপদ’ বুঝতে পারেননি।
বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা বুঝছেন, গত বিধানসভার চেয়ে ভোট শতাংশ বেড়েছে। আসন না পেলেও। অমিত না-নামলে এটাও হত না। তবে দলের এক সাংসদের কথায়, মেরুকরণের সঙ্গে উন্নয়নের বিষয়েও জোর দিলে লাভ হত বেশি। কারণ, কেজরিওয়াল মেরুকরণে পা দেননি। ফলে লড়াইটা একতরফা হয়ে গেছে
কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, অমিত শাহ ‘কারেন্ট’ লাগাতে চেয়েছিলেন, ‘শর্ট সার্কিট’ হয়ে গেছে। ঝটকা খেয়ে এখন নিজেই গৃহবন্দি। (স্বরাষ্ট্র) মন্ত্রণালয় চালাবেন কি?
বিজেপির এক নেতার মতে, দিল্লিতে কংগ্রেস ও বিজেপির একই হাল। দলের নেতারা কেউ কারো মুখ দেখতে চান না। যে কারণে গত বিধানসভায় বিজেপির নেতা-কর্মীরা কাজ করেননি। আজও ফল প্রকাশের পর বিজেপির অনেক নেতা ঘরে সমর্থকদের লাড্ডু খাইয়েছেন। তবে অমিত শাহ পরিশ্রম করে কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছিলেন। আসন মেলেনি ঠিকই। তবে তিনি না নামলে অনেক আসনে আপ প্রার্থীদের ভোট শতাংশের ব্যবধান কমত না।
বিজেপির দিল্লি প্রদেশ দপ্তরে পা রাখতেই অমিত শাহের ছবি। নীচে লেখা, ‘জয়ে অহঙ্কার নয়, হারেও হতাশা নয়’। আসতে-যেতে সেটি পড়েই স্বস্তি খুঁজছেন অনেকে। আনন্দবাজার।